বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজ শেরপুরের সোহাগপুর গণহত্যা দিবস

শেরপুর প্রতিনিধি
  ২৫ জুলাই ২০২১, ১৯:৩৬

২৫ জুলাই শেরপুর জেলার সোহাগপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক নৃশংস গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাঁকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে। পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনী এদিন ভারত সীমান্তঘেঁষা এ গ্রামের সকল পুরুষ মানুষকে হত্যা করে। সকল পুরুষ মানুষকে হত্যা করায় এই গ্রামের নাম হয় বিধবাপল্লি।

এ পল্লিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ৫৬ জন বিধবা বেঁচে ছিলেন। বর্তমানে ২৩ জন বিধবা বেঁচে আছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিধবাদের ভাগ্য বদল হয়েছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে সোহাগপুর গ্রামে। ইতোমধ্যেই ২৯ বিধবাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখ টাকা মূল্যের একটি করে পাকাবাড়ি উপহার দিয়েছেন। ১৪ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিধবাপল্লিতে পাকা সড়ক হয়েছে। কাঁকরকান্দির বুরয়াজানি গ্রামে শহীদদের স্মরণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় করে দিয়েছেন স্থানীয় এমপি । সুদীর্ঘ ৫০ বছর পর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার জন্য জেলা পুলিশ বিভাগের সদস্যরা তাদের বেতনের টাকা দিয়ে বিধবাদের জমি ক্রয় করে দিয়েছেন। এছাড়া বিধবাপল্লিতে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।

এসবের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বিধবা হাফিজা বেওয়া বলেন, ‘স্বামী-স্বজনগরে মাইরা হালানির পরে আমরা ভিক্ষা কইরাও ভাত খাইছি। শেখ হাসিনা ও মতিয়া চৌধুরী আমগরে লাইগা অনেক করছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধার পদবি পাইছি। ভাতা পাইতাছি। পাক্কাঘরে শান্তিতে ঘুমাইতাছি। আমগরে চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নাই। শুধু দোয়া করি হাসিনারে আল্লাহপাক বাঁচাইয়া রাখুক।’

ওই গ্রামের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ছফির উদ্দিনের ছেলে জালাল উদ্দিন (৫০) বলেন, বিধবারা সুখের মুখ দেখলেও তাদের সন্তানরা কষ্টে চলেন। তাদের জন্য সরকারিভাবে কর্মসংস্থানের দাবি জানান তিনি। এদিকে দিবসটি পালন উপলক্ষে কোরানখানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন ময়মনসিংহের আলবদর কমান্ডার জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান ও স্থানীয় রাজাকার কাদের ডাক্তারের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর একটি দল ’৭১-এর ২৫ জুলাই সকাল সাতটায় সোহাগপুর গ্রাম ঘিরে ফেলে। এ সময় গ্রামের পুরুষ মানুষ যাকে যেখানে পেয়েছে তাকেই গুলি ও ব্রাশফায়ার করে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। বর্বরতা এখানেই শেষ নয়। গ্রামের কিশোরী ও গৃহবধূদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় পাক হানাদার বাহিনী।

মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে গ্রামের ১৮৭ জন পুরুষ মানুষকে হত্যা করা হয়। সেই থেকে সোহাগপুর গ্রামের নাম হয় বিধবাপল্লি। গণহত্যা শেষে রাজাকার আলবদররা ঘোষণা দেয় নিহতরা কাফের। এদের লাশ দাফন করা যাবে না। ফলে ভয়ে আতঙ্কে অনেকেই সেদিন তাদের স্বজনকে ফেলে রেখে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে যায়। প্রিয় স্বজনের লাশ হয় শিয়াল কুকুরের খাবার। কেউ কেউ রাতের আঁধারে এসে গোসল, জানাজা ছাড়া গর্ত করে একসঙ্গে অনেকের মৃতদেহ গ্রামের বিভিন্নস্থানে মশারি ও কাঁথা পেঁচিয়ে পুঁতে রাখে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সোহাগপুরের খবর জানত না কেউ। এ সময় ভিক্ষা করে জীবন চলত বিধবাদের। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এলাকার এমপি হয়ে সর্ব প্রথম সোহাগপুরের বিধবাদের জনসম্মুখে আনেন। তিনি নিজ তহবিল থেকে শহীদ জায়াদের জন্য চাল ও ভাতার ব্যবস্থা করে দেন। ছাগল কিনে দিয়ে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা শুরু করেন। পরে তার চেষ্টায় সেনাবাহিনী, ট্রাস্ট ব্যাংক, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক বিধবাদের মাসিক অর্থ সহায়তা দেওয়া শুরু করে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে