শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

নেছারাবাদের কুড়িয়ানা ইউনিয়নে ভাসমান ডিংগি নৌকার হাট এখন জমজমাট

নেছারাবাদ উপজেলা প্রতিনিধি
  ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:১১
নেছারাবাদের কুড়িয়ানা ইউনিয়নে ভাসমান ডিংগি নৌকার হাট এখন জমজমাট
নেছারাবাদের কুড়িয়ানা ইউনিয়নে ভাসমান ডিংগি নৌকার হাট এখন জমজমাট

আবহমান বাংলার ঐতিহ্য নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানার ঐতিহ্যবাহী ভাসমান নৌকার হাট এখন জমজমাট। খাল পাড়ে বেঁধে রাখা হয়েছে সারি সারি ডিঙি নৌকা। আবার খাল বেয়ে নৌকা নিয়ে হাটে আসছেন বিক্রেতারা। বড় ছোট নৌকা ট্রলারে করেও হাটে নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। ঢেউয়ের তালে তালে চলছে কেনাবেচা। ডিংগি নৌকার বেচাকেনার এই হাট শত বছরের পুরনো। এই ডিংগি নৌকার মনোরম দৃশ্য দূর দুরন্ত থেকে ক্রেতা বিক্রেতার পাশাপাশি আসছে পর্যটক।

বর্ষা মৌসুমে এই দৃশ্য চোখে পড়বে নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানার খালে সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার দুই দিন। বর্ষা মৌসুমে শস্য ও পেয়ারার উৎপাদন বেড়ে গেলে কৃষকরা ভাসমান বাজারে ছোট বড় ডিঙ্গি নৌকায় বেচাকেনা হয় এই কাঁচা মাল। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এই হাট। এটি দক্ষিণ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় নৌকার হাট নামে পরিচিত।

নেছারাবাদ, ঝালকাঠির ভীমরুলি ও বরিশালের বানারীপাড়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের এই এলাকাগুলোতে ব্যাপক আকারে পেয়ারা ও আমড়ার চাষাবাদ হয়। হাটে আসা একাধিক নৌকা বিক্রেতা ও স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে এ উপজেলার দেশ বরণ্য কুড়িআনার আপেল খ্যাত পেয়ারা, আমড়া, চাই দিয়ে মাছ ধরা এবং গো-খাদ্য সংগ্রহে নৌকার কদর বেশি থাকে। মূলত এই আমড়া ও পেয়ারার চাষ হয় খাল তীরবর্তী বাগানে। যা সংগ্রহ করতে প্রয়োজন হয় এই নৌকার। পাশাপাশি জলপ্রধান এলাকা বলে মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার জন্যও নৌকার দরকার হয়। আবার এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি পরিবারই যাতায়াতের জন্য নিজস্ব নৌকা ব্যবহার করেন। আটঘর নৌকার হাটের মূল ক্রেতা তারাই।

নৌকা ব্যবসায়ী তপন হাওলাদার বলেন, হাটের দিন ভোরে কারিগরদের কাছ থেকে নৌকা কিনে ট্রলারে করে হাটে নিয়ে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। বেচাকেনা ভালো হলে প্রতি হাটে ৫০ থেকে ৬০টি নৌকা বিক্রি হয়। নৌকা প্রতি লাভ হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। আবার কখনও লোকসানও গুনতে হয়।

নৌকা তৈরীর কারিগর মনোতোষ মজুমদার বলেন, এখন সুন্দরী কাঠ পাওয়া যায় না তেমন। কড়ই, চাম্বল ও রেইনট্রি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় নৌকা। আমার পূর্বপুরুষ এই পেশার সাথে জড়িত ছিল জন্মের পর থেকে আমিও নৌকা তৈরি করে জীবন যাপন করি। দুই মাস পরিশ্রম করে যা পাই সমস্ত মাস পরিবার নিয়ে চলতে হয়, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া সহ সংসার চালাতে খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

এছাড়াও নানা অভিযোগ পাওয়া যায় ইজারাদারের বিরুদ্ধে তারা নানা অজুহাতে বেশি টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতা ও ক্ষুদ্র পরিবহন শ্রমিকদের। গাড়িচালক বাবুল শেখ বলেন, বিক্রি হওয়া নৌকা গাড়িতে তুললেই তাদেরকে ৩০-৪০ টাকা করে দিতে হয়।

আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার বলেন, এই বাজারে এসে কোন ক্রেতা এবং বিক্রেতা যাতে হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটকদের বসার জন্য প্রয়োজনে বড় ছাতা ও শেট এর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এছাড়াও বাজারকে ঘিরে আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব উল্লাহ মজুমদার বলেন, এই ঐতিহ্যবাহী হাটটি শতবর্ষ পূর্বে থেকেই শুরু হয়েছে। এখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভ্রমণ করতে আসে। তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন সব সময় সোচ্চার। এই হাটের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে উপজেলা প্রশাসন সবসময় লক্ষ্য রাখছেন।

যাযাদি/এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে