শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

মধ্যনগর সীমান্তে চোরা কারবারি ও মাদকের রমরমা ব্যবসা

ধর্মপাশা-মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৫০
মধ্যনগর সীমান্তে চোরা কারবারি ও মাদকের রমরমা ব্যবসা

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সীমান্ত এখন চোরা কারবারিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।

প্রতি রাতে চোরা কারবারিরা ভারতের মেঘালয় পাহাড় পাড়ি দিয়ে ভারত থেকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে চোরাচালানী পণ্য - গরু, মহিষ, মাদকদ্রব্য মদ, ইয়াবা,গাঁজা, কসমেটিক্স, শাড়ী কাপড়, চিনি, কাঁচা সুপারি, চা পাতাসহ বিভিন্ন পণ্য আনছে অবাধে।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হচ্ছে ছোলাবুট, শুকনো সুপারী, পটের দুধ, মটরসুটি ইত্যাদি পণ্য।

জানা গেছে, উপজেলার ভারতের সীমান্তবর্তী উত্তর বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের আন্তরপুর গ্রাম, মহেষখলা, কাইতাকুনা, কড়ইবাড়ী, গুলগাঁও, রূপনগর ও কান্দাপাড়া গ্রামের একটি সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র সীমান্ত রক্ষী বিজিবি’র প্রত্যক্ষ মদদে মধ্যনগর থানার ওসি মোহাম্মদ এমরান হোসেনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ। এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

মধ্যনগর উপজেলার মহেষখলা, কাইতাকোনা, কড়ইবাড়ী (কড়ই চড়া), আমতলা, ঘিলাগড়া, বাঙ্গালভিটাসহ সীমান্তে দিয়ে প্রতিদিন পুলিশ, বিজিবি বাহিনীর নিয়োজিত সোর্সের মাধ্যমে চাঁদা আদায় হচ্ছে। এভাবে প্রতি রাত গরু, মহিষ, মাদকদ্রব্য মদ, ইয়াবা, গাঁজা, চিনি, চা পাতা, কক্সমেটিক্সসহ লাখ লাখ টাকার ভারতীয় চোরাইপণ্য ঢুকছে এই সীমান্ত পথে। এ যেন দেখার কেউ নেই। এক কথায় চোরা কারবারিদের স্বর্গরাজ্য মধ্যনগর সীমান্ত। আর এক অদৃশ্য কারণে নিরব রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

মধ্যনগর থানার নিয়জিত ল্যাইনম্যান দাতিয়াপাড়া গ্রামের উজ্জল মিয়া থানার নামে চোরা কারবারিদের থেকে ভারতীয় গরু প্রতি ৪শ' টাকা ও মহিষ প্রতি ৭০০শ'ত টাকা করে পুলিশের বখরা আদায় করে থাকেন। চোরাইপথে আনা চিনির প্রতি বস্তা প্রতি ১০০শ' টাকা আদায় করেন ।

সুপারির বস্তা প্রতি ২শত করেন টাকা করে বখরা আদায় করে থাকেন। এবং নদীপথে আসা কয়লার প্রতি নৌকার কাছ থেকে ২ হাজার করে বখরা আদায় করে থাকেন।

মধ্যনগর থানার ল্যাইনম্যান উজ্জল মিয়া প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার পুলিশের নামে বখরা আদায়ের টাকা উত্তোলন করে প্রতি বাধুবার এসআই কাজল ও এসআই মুশিউর রহমানের মাধ্যমে ওসি এমরান হোসেনকে দিয়ে আসেন। থানার লাইন ম্যান উজ্জ্বল ও এসআই কাজল এবং এসআই মুশিউর রহমানের আত্যাচারে সাধারন মানুষ অতিষ্ঠ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,পাচারকারী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের রাতের অন্ধকারে নিরাপদ স্থান ভারতের সীমান্ত এলাকা। ভারতীয় গরু, মাদক, চিনি, শাড়ি, লেহেঙ্গা ও কসমেটিকসহ বিভিন্ন পণ্য পাচারকারী চক্রটি প্রতিদিন সন্ধ্যার চোরাইপথে নামিয়ে বন জঙ্গলে রেখে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে বিক্রি করে।

মধ্যনগর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎকান্তি সরকার বলেন, যেভাবে প্রতি রাতে সীমান্তে গরু, মহিষ, মদ, গাঁজা ও ইয়াবা চিনি, কসমেটিক, আসছে, তাতে এলাকার যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে চলে যাবে।

তিনি আরো জানান, মধ্যনগর থানার ওসি সাবকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

উত্তর বংশীকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান নুরনবী তালুকদার বলেন, 'আমাদের বর্ডার এলাকায় গরিব অসহায় লোকজন হয়তো কিছু টুকটাক ব্যবসা করলেও করতে পারে, তবে ব্যাপকভাবে নয়। তারপরও ভারতীয় বিএসএফ, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) টহল অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও চোরাইপথের কিছু পণ্য আসতেও পারে তবে আমার জানার বাইরে।

মধ্যনগর থানার ওসি মোহাম্মদ এমরান হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ এ কাজের সাথে জড়িত নয়।

বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবির) ২৮ সুনামগঞ্জের অধিনায়ক মো. মাহবুবুর রহমানের সরকারি ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করা তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নাই।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন)আবু সাইদ বলেন- চোরাচালন বন্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।যদি কোন পুলিশ সদস্য জড়িত থাকে তাহলে তা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ্‌ বলেন, 'এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে খুব শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে