গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে সরকারি এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
অভিযুক্ত শওকত আলী শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বাসিন্দা ও শ্রীপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা। অপরদিকে সংক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান মোড়ল। তিনি বরমী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। লিখিত অভিযোগে আব্দুল মান্নান ছাড়াও আরো চার বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বাক্ষর করেছে।
দায়ের অভিযোগ বিশ্লেষণ করে ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বরমী ডিগ্রী কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনকে দাওয়াত করা হয়। এতে মোঃ শওকত আলী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আমন্ত্রিত হন। মঞ্চে অধ্যক্ষের বক্তব্য শেষে উপস্থাপক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্যের জন্য আহবান করেন। তবে তিনি মাইকে আহবানের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে বণিক সমিতির কোনো একটি পদের ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। এতে আব্দুল মান্নান সহ মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা সংখুব্ধ হন। বিষয়টি নিয়ে মৃদু প্রতিবাদ করেন তারা। এতে একই মঞ্চে উপস্থিত শওকত আলী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। একই সঙ্গে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়েও অবমাননাকর কথা বলেন। এক পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মাইকে কথা বলতে বাধা প্রদান করেন। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, শওকত আলী নিজ এলাকায় অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একই কর্মস্থলে টানা নয় বছর ধরে চাকরি করছেন। তার বিরুদ্ধে জমির জবরদখল সহ নানা অভিযোগ আছে।
অভিযোগে স্বাক্ষরকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, শওকত আলী কমান্ডারকে কথা বলতে বাধা দিয়েছেন। তিনি তাকে অপমান করে বিভিন্ন কথা বলেছেন। ইতিপূর্বে শওকত আলী মুক্তিযোদ্ধাদের নামে লিজ দেওয়া জমি জবরদখল করেছেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তা হয়েও রাজনীতির মাঠের সক্রিয়।
বরমী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির বলেন, দুই বছর আগে তিনি এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করে কথা বলেছিলেন। লাঞ্ছিত করেছিলেন। এসব অভিযোগে তখন তার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। ওই ডায়েরির প্রেক্ষিতে থানা পুলিশের সমন্বয়ে বিষয়টি মীমাংসা হয়। তবুও তিনি থামেননি। যখন তখন মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করে কথা বলেন। মুক্তিযোদ্ধারা ভিক্ষা করে খান বলেও বলে বেড়ান।
অভিযোগ অস্বীকার করে শওকত আলী বলেন, "মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে আমরা আমন্ত্রিত অতিথি ছিলাম। আমি কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। এসব অভিযোগ মোটেও সত্যি নয়"।
শ্রীপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহবুব আলম এ প্রসঙ্গে বলেন,"এমন অভিযোগ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আপনার কাছ থেকে শুনলাম। অভিযোগ পেলে উর্ধতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে"।
বরমী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন,"সেসময় অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তাই বিষয়টি সরাসরি নিজে দেখিনি। তবে, শুনেছি বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কথা বলতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। বিস্তারিত জানা নেই"।
যাযাদি/ এস