শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

এস আলম সুগার মিল পুড়ছে এখনও, আগুন নেভাতে সময় লাগবে আরো তিনদিন!

চট্টগ্রাম অফিস
  ০৫ মার্চ ২০২৪, ১৪:৫৭
এস আলম সুগার মিল পুড়ছে এখনও, আগুন নেভাতে সময় লাগবে আরো তিনদিন!

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের গুদামে লাগা আগুন এখনও নেভেনি। দাহ্য পদার্থ থাকায় গুদামের ভেতরের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। আগুন পুরোপুরি নিভাতে আরো তিনদিন লেগে যেতে পারে।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক বলেন, বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে যতটুকু ফায়ার সেফটি প্রয়োজন ততটুকু এস আলম সুগার মিলে ছিল না। বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফায়ার সেফটি আরও বেশি ভালো থাকার দরকার ছিল।

একই কথা বলেছেন চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, চিনির কাঁচামালগুলো দাহ্য পদার্থ। সেগুলো না সরানো পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব নয়। ফলে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করতে তিনদিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, আগুন নির্বাপণে অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়েছে। এখানে রিজার্ভভারগুলো আরও কাছে থাকলে ভালো হতো। যে রিজার্ভভারটি কাছে পেয়েছি তা একটু ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে এখানে ফায়ার হাইড্রেন্ট দরকার। ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো থাকলে এতো বেগ পেতে হতো না। আগুন নেভাতে আরও সহজ হতো। এখানে ফায়ার সেফটি ইনসিকিউরড।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, গোডাউনের ভেতরে ১২০০ থেকে ১৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আগুন জ্বলছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঢুকতে পারছেন না। কারণ আগুনের তাপমাত্রা বেশি। ফলে আগুনে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি আগুন কিভাবে লেগেছে তাও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে অগ্নিকান্ডে কোনো হতাহত নেই।

এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক বলেন, গোডাউনে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা এক লাখ টন চিনির কাঁচামাল ছিল। এর পুরোটাই পুড়ে গেছে বলে আশঙ্কা করছি।

এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের পাওয়ার প্লান্টের সহকারী ফিটার মনির বলেন, গুদামে প্রায় এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ছিল। এগুলো পুড়ে গেছে। কাছেই পরিশোধিত চিনি আছে আরও কয়েক লাখ টন।

তিনি জানান, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও থাইল্যান্ড থেকে চিনির কাঁচামাল এনে এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলসের দুটি প্লান্টে পরিশোধন করা হয়। এর মধ্যে প্লান্ট-১ এর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৯০০ টন। প্লান্ট-২ এর উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ টন। থাইল্যান্ড এবং ফ্রান্সের প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তায় কারখানাটি পরিচালিত হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, সোমবার (৪ মার্চ) বিকেল ৩ টা ৫০ মিনিটে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের এই চিনিকলের একটি গুদামে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। বিকেল ৪টার দিকে খবর পেয়ে শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট, পরে আরো ৫টি ইউনিটসহ মোট ৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবু আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় যুক্ত হয় আরো ৭টি ইউনিট। সবমিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট কাজ করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা জান্নাত জানান, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের আগুন নির্বাপণকাজে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ১০০ সদস্য, নৌবাহিনীর ১২ সদস্যের দুটি টিম, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য সহযোগিতা করছেন।

তবে মঙ্গলবার সকালে আগুন নেভাতে দেখা গেছে শুধু ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। এছাড়া, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় বেশ কিছু ইউনিট স্টেশনে ফিরে গেছে। বর্তমানে সাতটি ইউনিট কাজ করছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, রাত সাড়ে ১১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু কারখানার ভেতর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আমরা আগুন নির্বাপণে কাজ করছি।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, এখনও আগুন জ্বলছে। তবে তীব্রতা কমে এসেছে।

এস আলম সুগার মিলের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার হাসমত আলী জানান, কারখানার পুরো প্রসেস এবং কারখানা নিরাপদ রয়েছে। আগুন যাতে ছড়াতে না পারে, সেজন্য গোডাউন থেকে কারখানার মুল প্ল্যান্টের আসার বেল্ট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে আগুন লাগার ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক ও ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা। কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে