লিচুর রাজধানী খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। যা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে দেবে বলে বিশ্বাস লিচু চাষীদের। কেননা বাগানের প্রায় প্রতিটি গাছেই ঝুলছে থোকা থোকা লিচুর মুকুল। মুকুল আসেনি এমন গাছের সংখ্যা অতি সামান্য হওয়ায় এবার লিচু চাষীদের ছোঁটে ফুটেছে বাড়তি তৃপ্তির হাসি। সেই সাথে মুকুল ভর্তি লিচুর গাছে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছির গুনগুনানিতে মুখরিত বাগান গুলোতে মৌসুমের ব্যবস্তা শুরু করেছে লিচু চাষীরা।
ঈশ্বরদীতে সাধারণত লিচুর চাষ শুরু হয় গত শতকের আশির দশক থেকে। প্রথমে শখের বসে হলেও বর্তমানে লিচুর চাষ হচ্ছে বানিজ্যিক ভাবে। গত বছরে ঈশ্বরদী উপজেলায় লিচু বিক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছিল ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। তবে সেই লক্ষমাত্রাকে এবার পেছনে ফেলে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা লিচুর ব্যবস্যা হবে বলে আশা করছেন লিচু চাষী এবং ব্যবসায়ীরা।
ঈশ্বরদী উপজেলার, মাথাল পাড়া, চরমিরকামারী, নওদাপাড়া, জয়নগর, রূপপুর, ভাড়ইমারী, শেখের দাইড়, বক্তারপুর, মুন্নার মোড়, জগন্নাথপুর, কদিমপাড়া, মানিকনগর, সিলিমপুর, সাহাপুর, আওতাপাড়াসহ সমস্ত এলাকার লিচুর বাগান গুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাগানসহ বাড়ীর আঙ্গীনায় থাকা গাছটিতেও এবার থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচুর মুকুল। মুকুলের ভর সইতে না পেরে অনেক গাছের ডাল হেলে পড়েছে। বাড়তি চাপে হেলে পড়া ডাল গুলোকে খুঁটি দিয়ে শক্ত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা।
বক্তারপুর এলাকার লিচু চাষী মো: আব্দুল রাজ্জাক যায়যায়দিনকে বলেন, গত কয়েক বছর লিচুর গাছে তেমন মুকুল আসেনি। কিন্তু এ বছর যে হারে গাছে মুকুল এসেছে তাতে কেবল আমার বাগানেই লিচুর রেকর্ড ফলন হবে। যদি সঠিক দাম পাই তাহলে অন্যান্য বছরের চেয়ে প্রায় দেড়গুন বেশী টাকা বিক্রি করতে পারব লিচু।
চরমিরকামরী গ্রামের লিচুচাষী এবং ব্যবসায়ী ইসহাক আলী জানান, লিচুর ব্যবসার স্বার্থে প্রতি বছরই উপজেলার লিচুর বাগান গুলো ঘুরে দেখতে হয়। সেই লক্ষেই এবারও ঘুরে দেখেছি। তবে এবারের মত লিচুর মুকুল আমি এর আগে দেখিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার উপজেলায় লিচুর বাম্পার ফলন হবে।
দাদপুরের লিচু চাষী মোঃ বিপ্লব হোসেন বলেন, আমার ৬টি বাগান মিলে মোট ৩৭০ টি গাছ রয়েছে। অন্যান্য বছর বাগানের অর্ধেক গাছে মুকুল আসে । কিন্তু এবারই প্রথম বাগানের কয়েকটি গাছ বাদে প্রায় প্রতিটি গাছেই ব্যপকহারে মুকুল এসেছে। যা এ যাবৎ কালের রেকর্ড। সব মিলিয়ে অন্যান্য বছরের চেয়ে ভালো হবে এমনটাই আশা করি।
বিস্মৃত এ উপজেলাতে ছোট বড় সব মিলিয়ে মোট ১১ হাজার ২৭০ টি লিচুর বাগান রয়েছে। যে বাগান গুলোতে প্রধানত ৩ জাতের লিচুর চাষ হয় সর্বোচ্চ। এর মধ্যে মোজাফ্ফর বা দেশী, বোম্বাই ও চায়না-৩ অন্যতম। তবে বর্তমানে সামান্য সংখ্যক কদমি, কাঠালি, বেদানা, চায়না-১ এবং চায়না-২ জাতের লিচুর চাষও হচেছ এ অঞ্চলে। তবে চায়না-৩ লিচুর স্বাদ ভালো এবং বেশী মিষ্টি হওয়ায় এই জাতের লিচু চাষের আগ্রহ বেশী রয়েছে।
যাযাদি/ এম