শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

২৫০ টাকার ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা

ইমরান হোসাইন, জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
  ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:২০
ছবি-যায়যায়দিন

ইদযাত্রাকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুরের যাত্রীদের গণপরিবহনে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন ভাড়া। প্রতিবছরই ঢাকা টু শরীয়তপুর রুটে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে বেড়ে যায় বাসের ভাড়া, বিভিন্ন রকম অজুহাতে বাড়ানো হয় এই ভাড়া। এবছরও ইদ বশিশ কিংবা ফিরতি ট্রিপে যাত্রী সংকট দেখিয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এদিকে পরিবারের সাথে ইদ কাটাতে দ্বিগুণ অর্থ দিয়েই টিকেট কাটতে বাধ্য হচ্ছে এই অঞ্চলের ঘরমুখো মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, রমজানের শুরু লগ্ন থেকেই ঢাকা কেন্দ্রীক বাস গুলোতে সুযোগ বুঝে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। প্রায় ১ মাসের পর্যবেক্ষণে আমাদের কাছে আসে বেশ ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ। এসময়ে আমরা দেখেছি দিনের বেলায় কিছু কিছু বাসে ভাড়া স্বাভাবিক থাকলেও দুপুরের পর থেকে শুরু হয় ভাড়া বাড়ানো নিয়ে পাল্লাপাল্লি। রাত নামলে এর মাত্রা ছাড়িয়ে যায় কয়েকগুণ। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে।

গত সোমবারের (৮-এপ্রিল) জরিপ অনুযায়ী শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস যাত্রাবাড়ী থেকে জাজিরা পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছে ৩০০ টাকা এবং শরীয়তপুর পর্যন্ত ৩৫০ টাকা। যেখানে অতিরিক্ত নিয়েছে ৫০ টাকা। এছাড়া শরীয়তপুর পরিবহন, পদ্মা ট্রাভেলস, গ্লোরি পরিবহন ও ফেম পরিবহনের ভাড়া ছিলো ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত। যা এই রুটের নিয়মিত ভাড়া থেকে কিছুক্ষেত্রে দ্বিগুনেরও বেশি।

সোমবার (০৯-এপ্রিল) ঢাকা থেকে শরীয়তপুর পরিবহনে উঠেছিলেন এমদাদুর রহমান(৩৪)। তিনি জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে বাসে উঠলেও তার থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া নিয়ে তাকে টিকিট দেয়া হয়েছে ২৯৮ টাকার। একইদিন যাত্রাবাড়ী থেকে জাজিরার উদ্দেশ্যে বাসে ওঠেন আনোয়ার(২৬) নামের আরেক পথযাত্রী। তিনি জানান, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয়েছে তার থেকে। শরীয়তপুর পরিবহনে যাত্রাবাড়ী থেকে জাজিরা পর্যন্ত তাকে ভাড়া দিতে হয়েছে ৪০০ টাকা।

যদিও তথ্য বলছে, জাজিরা/কাজিরহাট পর্যন্ত বিআরটিএ'র নির্ধারিত ভাড়া ২৫০ টাকা এবং শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত ২৯৮ টাকা। কিন্তু মঙ্গলবার (০৯-এপ্রিল) সকাল থেকে ঢাকা টু শরীয়তপুর মুখী ভাড়া ছিলো সর্বনিম্ন প্রায় ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা পর্যন্ত।

জাজিরা লাউখোলার বাসিন্দা গার্মেন্টস শ্রমিক আসলাম শিকদারের(৩৫) সাথে কথা হলে তিনি জানান, সারা বছরে এই একবার বাড়ি আসি ছুটিতে। এই ইদে পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনা-কাটা যাতায়াত খরচ সব মিলিয়ে একটা চাপ যায় আমাগো মত নিম্ন আয়ের মানুষের। এর মধ্যে বাসের ২৫০ টাকার ভাড়া ৬০০ নেয়া হয়। এইটা আমাদের জন্য জুলুম হয়ে যায়। ইদের মতো পবিত্র উৎসবকে পুঁজি করে ব্যবসা করা অমানুষদের বিচার আল্লাহ করবে।

বিগত দিনগুলোতেও এই পরিবহনগুলোর নামে রয়েছে ভাড়া সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ। গত (৬-মার্চ) বুধবার শরীয়তপুর থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা যান ইয়াসমিন বেগম(৩৯)। মগবাজার থেকে ডাক্তার দেখিয়ে রাত ৯.৪০ এর সময় তার ছেলেকে নিয়ে যাত্রাবাড়ী গিয়ে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের বাসে উঠতে গেলে সেখানে সিরিয়ালে থাকা বাসটিতে সিট নেই বলে পরের বাসে উঠার অনুরোধ করেন বাসের সুপারভাইজার।

পরের বাস আসলে তিনিসহ স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকা প্রায় ৫০ জন লোক বাসে উঠার কিছু সময় পর বাসের সুপারভাইজার উঠে জানায় এটা টাইমের পরের বাস, তাই ভাড়া দিতে হবে ৩০০ টাকা করে। ভাড়া ৩০০ টাকা নিলেও টিকেট দেয়া হয় ২৫০ টাকার। এনিয়ে বাসে কেউ কেউ প্রতিবাদ করে উঠলে তাদের বাস থেকে জোর করে নামিয়ে দেয়ারও চেষ্টা চালানো হয়।

এবিষয়ে শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর শরীয়তপুর এর সহকারী পরিচালক সূজন কাজী জানান, আমাদের কাছে এপর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি, তবে নানা মাধ্যমে জেনেছি অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে বাসে। আমি ভুক্তভোগীদের লিখিত অথবা অনলাইনে অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। যদি কোন ভোক্তা অভিযোগ করেন তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে সেক্ষেত্রে আমরা পদক্ষেপ নিবো। বিগত বছরগুলোতে অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিলো।

বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ জানান, সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণে এই সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ আমরা জেনেছি। এ নিয়ে আমাদের মোবাইল কোর্ট প্রতিদিনই চলমান আছে। প্রতিদিনই আমরা টার্মিনালে যাচ্ছি। কিছুদিন আগে এটা নিয়ে আমাদের মিটিং হয়েছে, আমরা বেশ কয়েকবার বাস মালিকদের সতর্ক করেছি। মূলত আমাদের এখান থেকে যে গাড়িগুলো ছাড়া হচ্ছে সেগুলোতে কোন অভিযোগ নেই, ঢাকা থেকে যে গাড়িগুলো ছাড়া হচ্ছে সেগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য: ২০২২ সালের (২৫-জুন) যাতায়াতের জন্য চালু হয় পদ্মাসেতু। পদ্মাসেতু উদ্ভোদনের পর থেকে শরীয়তপুর থেকে সরাসরি ঢাকা পর্যন্ত চালু হয় বাস চলাচল। একাধিক পরিবহন মাঠে নামায় শতশত কোটি টাকা মূল্যের বাস। কোন ধরণের লোকাল সার্ভিস না থাকায় ঢাকা থেকে শরীয়তপুর রুটের বাসের মালিকেরা বেশ লাভে আছে বলেই ধারণা করা হয়। যদিও লোকসানে আছে বলে দাবি তাদের।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে