সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিজ জেলায় চাকরি করে উপজেলা প্রকৌশলীর নানা অনিয়ম

তারাকান্দা প্রতিনিধি
  ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৫০
আপডেট  : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৪৫
নিজ জেলায় চাকরি করে উপজেলা প্রকৌশলীর নানা অনিয়ম

সরকারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা সাধারণত নিজ জেলায় পদায়ন না পেলেও বিভিন্ন মাধ্যমে লবিং করে নিজ জেলায় পদায়ন নিয়ে দাপটের সাথে চাকুরী করছেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেন। যোগদানের পর থেকে স্বজনপ্রীতি, ঘুষ বানিজ্য সহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার সোনারগাঁও গ্রামে। গত ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নিজ জেলার তারাকান্দা উপজেলায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। এই উপজেলায় উপজেলা প্রকৌশলীর পদ শুন্য থাকায় জোবায়ের হোসেন এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

জোবায়ের হোসেন এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকে কাজের চুক্তি ও বিল ছাড়ের সময় কমিশন নেওয়া, বিভিন্ন অজুহাতে ঠিকাদারদের হয়রানি করাসহ নানা অনিয়ম করে আসছেন। এছাড়াও ঠিকাদারদের সড়ক নির্মাণ, মেরামত, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ ও মেরামতের কাজের বিলের ফাইল চাপা রেখে ঘুষ আদায় করেন।

এদিকে জোবায়ের হোসেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যকে নিজের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও ঠিকাদারদের উপরে খবরদারি করছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করায় তার অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বিব্রতবোধ করেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। তার কাছে ঠিকাদারদের সম্পর্কে কথা বলতে ভয় পান অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা সর্বদাই তটস্থ থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার বলেন, টাকার বিনিময়ে তিনি ঠিকাদারদের রেট কোড দেন। কাজ পেলে চুক্তির সময় প্রাক্কলিত মূল্যের দুই শতাংশ তাকে দিতে হয়। এছাড়া নিয়ম মেনে কাজ শতভাগ সঠিকভাবে করা হলেও বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি খুঁজে বের করে নানা অজুহাতে ঠিকাদারদের হয়রানি করেন। তাকে টাকা দিলে খারাপ মানের উপকরণ দিয়েও কাজ করা যায়। ঘুসের টাকা লেনদেনের প্রমাণ একাধিক ঠিকাদারের কাছে রয়েছে বলে তারা জানান।

জোবায়ের হোসেন, নিজের এক বন্ধুর ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়ে নিজেই ঠিকাদার সেজে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ করছেন। এছাড়াও ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের এডিবি, এডিবি স্পেশাল ও রাজস্ব তহবিল ২ কোটি টাকা কাগজ পত্রে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।

তবে নিজের সকল অপকর্মের কথা অস্বীকার করেন তারাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলী জোবায়ের হোসেন। তিনি বলেন, মানুষ অভিযোগ করতেই পারে। তদন্ত করে দেখেন। নিজ জেলায় পোস্টিং নিয়ে কোন কথা বলতে পারবো না। আমার পোস্টিং অর্ডার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অবশ্যই আইন কানুন দেখেই করেছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, তারাকান্দা উপজেলা প্রকৌশলীর অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি জানা নেই। যেখানে অর্ডার হয়েছে সেখানে চাকরি করতে পারবেন। কিভাবে নিজ জেলায় হয়েছে যিনি অর্ডার করেছেন তিনি জানেন।

নিজ জেলায় পদায়ন পাওয়া নিয়ে এলজিইডি হেডকোয়ার্টারের নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রশাসন) আবু হানিফ মৃধা বলেন, অন্যান্য সকল দফতরের মতো এলজিইডিতেও নিজ জেলায় সহকারী প্রকৌশলীদের চাকুরির সুযোগ নেই। তারাকান্দা উপজেলার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে