ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ইতিহাসে প্রথম ৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভা বন্যার পানিতে প্লাবিত হলো।ফেনীর একমাত্র সাগর উপকূলীয় এলাকা হলেও পুরো উপজেলায় বন্যার রেকর্ড এই প্রথম। প্লাবিত হয়েছে জনপদ। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে পরশুরাম,ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি ভাঙন অংশে ভারত থেকে নামা পাহাড়ী ঢলের পানি প্রবেশ করতে থাকে লোকালয়ে এতে পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ ও গবাদিপশু।
এখনও এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানাযায়।
সেনাবাহিনী ও বেশ কিছু সেচ্ছাসেবী সংগঠন হেলিকপ্টার ও স্পীডবোর্ড় দিয়ে দিনরাত ত্রান ও উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ধারনা করা হচ্ছে এসব এলাকায় হতাহতের সংখ্যা হতে পারে অনেক।যদিও এখনো পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩ জন বলে জানাযায়।
বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার পানির নিচে ডুবে যাওয়ার কারনে পুরো জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ব্রডব্যান্ড নিস্ক্রিয় হয়ে যায়।সারাদেশের সাথে ফেনী জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
ফেনী শহর ও সদর উপজেলা জেলার কয়েকটি উপজেলা এবং দাগনভূঁইয়া উপজেলা রাজাপুর,সিন্দরপুর এলাকা প্লাবিত হয়ে বর্তমানে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। এছাড়া ফেনী শহরের ১৮ টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার শর্শদী,ফাজিলপুর,কালিদহ,ছনুয়া,লেমুয়া ও ফরহাদ নগর প্লাবিত হয়। পানিতে তলিয়ে যায় ঢাকা-চট্রগ্রাম জাতির মহাসড়কের কয়েকটি স্থান, বর্তমানে এ মহাসড়কে দীর্ঘ সারির যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলমান রয়েছে।
এছাড়া বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট সহ পুকুরের মাছ। জেলা-উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে পানি থাকায় বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যোগাযোগ। এসব উপজেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বুক পরিমাণ পানি। বানভাসি মানুষের ঠাঁই হয়েছে সরকারি, বেসরকারি ও মসজিদের ২য় তলা থেকে উপরিভাগে।
রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ আগস্ট মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি অংশে ভাঙনের দেখা দিয়েছিল। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে গত সোমবার দুপুর থেকে আবারও ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার লোকালয়ে পানি ঢুকে তিন উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি আছে।
এরপর গত ২১ আগস্ট সকাল থেকে ভারতীয় উজানের পানি বাড়ার সাথে সাথে কুমিল্লার পাশাপাশি ফেনী শহর, ফেনী সদর উপজেলা, দাগনভূঁইয়া ও সোনাগাজী উপজেলা প্লাবিত হতে থাকে।ভরা বর্ষায় জেলার বড় ফেনী নদী, ছোট ফেনী ও মাতামূহুরী নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কাজ হয়। এ নদী গুলি সরাসরি বঙ্গোপসাগরে দিয়ে মিলিত হয়েছে। নদী গুলির পানি নিস্কাশন ক্ষমতার চেয়ে ভারতীয় উজানের প্রবাহিত পানির পরিমান ছিল প্রায় ১০ গুন বেশি যার ফলে সর্বোপরি ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে সোনাগাজীর ৯ ইউনিয়ন যথা, চরমজলিশপুর, বগাদানা,মঙ্গলকান্দি,মতিগঞ্জ, নবাবপুর,আহমদপুর, সদর,চরচান্দিয়া ও চরদরবেশ এবং পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, ২ আগস্ট মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭ অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ধারনা করা যাচ্ছে না।
যাযাদি/ এস