শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

ইয়াবাসহ আটকের পর বিএনপি কর্মীর মৃত্যু, থানার সামনে স্থানীয়দের বিক্ষোভ

মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
  ২০ জুন ২০২৫, ১৬:১২
আপডেট  : ২০ জুন ২০২৫, ১৬:১৪
ইয়াবাসহ আটকের পর বিএনপি কর্মীর মৃত্যু, থানার সামনে স্থানীয়দের বিক্ষোভ
বিএনপি কর্মীর মৃত্যু পর থানার সামনে স্থানীয়দের বিক্ষোভ। ছবি: যায়যায়দিন

কুমিল্লায় পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ আটকের পর শেখ জুয়েল নামের এক বিএনপি কর্মীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুয়েলের মৃত্যু হয়। এদিকে পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে থানার সামনে বিক্ষোভ করছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

শেখ জুয়েল (৪৫) পেশায় একজন ইন্টারনেট ব্যবসায়ী। তিনি মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের বাসিন্দা।

তার পরিবারের দাবি, পুলিশের নির্যাতনে জুয়েলের মৃত্যু হয়েছে। তবে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঙ্গরা বাজার ব্রিক ফিল্ড এর পূর্ব পাশে জনৈক হেলালের বাড়ি থেকে ৭০ পিস ইয়াবাসহ জুয়েল ও তার ৪ সহযোগীকে আটক করে থানায় আনা হয়। রাতে হাজতে জুয়েল অসুস্থ হয়ে পড়লে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জুয়েলের স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমার স্বামী ইন্টারনেটের বিল কালেকশন করতে যায়। দুপুরের পরপরই খবর পাই যে আমার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পরে থানায় গিয়ে আমার স্বামীর সাথে কথা বলতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। অনেক অনুরোধ করে তার সাথে দেখা করি। সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় আমার স্বামী আমাকে বলেছে যে আমি কিছু করি নাই। আমাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করো।

তিনি আরও বলেন, রাতে খবর পাই আমার স্বামীকে মুরাদনগর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার স্বামী আর বেঁচে নেই। পুলিশ আমার স্বামীকে মেরে ফেলছে।

জুয়েলের ছেলে শেখ সিহাব বলেন, বিনা অপরাধে পুলিশ আমার বাবাকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলছে। আমার বাবাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাপারেও পুলিশ আমাদের কিছু জানায়নি। আমরা হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে মৃত দেখতে পাই।

জুয়েলের চাচাত ভাই বিএনপি নেতা শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই জুয়েল বিএনপির কর্মী। বাঙ্গরা বাজার থানার এসআই আল আমিন তাকে ধরে নিয়ে গেছে খবর পেয়ে রাত সাড়ে আটটায় কল দিয়ে জুয়েলের বিষয়ে জানতে চাই। তখন তিনি আমাকে মুরাদনগর হাসপাতালে আসতে বলে। হাসপাতালে এসে দেখি আমার ভাইকে মৃত অবস্থায় ফেলে রেখেছে।

মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে জুয়েলকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। আমরা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তাকে মৃত অবস্থায় পাই। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে মৃত্যুর খবর এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয়রা রাতে বাঙ্গরা বাজার থানার সামনে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে রাত পৌনে ১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭০ পিস ইয়াবাসহ জুয়েল ও তার আরও ৪ সহযোগীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে রাতে থানায় সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, আটক জুয়েলকে পুলিশ নির্যাতন করেনি। অন্য কোন কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। শুক্রবার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে