বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

জয়পুরহাটে জি-থ্রি রুই মাছ চাষে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত 

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
  ২৫ জুন ২০২৫, ১১:০২
জয়পুরহাটে জি-থ্রি রুই মাছ চাষে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত 
জি-থ্রি রুই মাছের পোনা তোলা হচ্ছে পুকুর থেকে; পাড়ে দাঁড়িয়ে তদারকি করছেন উদ্যোক্তা লিটন। ছবি: যায়যায়দিন

জি-থ্রি রুই মাছ চাষে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার মধ্য দাদড়াযন্তী গ্রামের মাছচাষি ওয়াহিদ ফেরদৌস লিটন। এক সময় বড় মাছ চাষ করে লোকসানে পড়া এই উদ্যোক্তা এখন বলছেন—“তিনটি পুকুরে জি-থ্রি রুই চাষ করছি। সেখান থেকে মাত্র তিন মাসে ৮ মণ বা ৩২০ কেজি মাছ বিক্রি করে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা পেয়েছি। সব খরচ বাদে লাভ হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা। এই হিসাবে গড়ে মাসে ৩৫–৩৬ হাজার টাকা করে আয় হচ্ছে।”

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (BFRI) উদ্ভাবিত ‘জি-থ্রি রুই’ মাছটি দ্রুত বর্ধনশীল, স্বাদে উৎকৃষ্ট এবং লাভজনক হওয়ায় জয়পুরহাটে এটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এক বছর আগে জেআরডিএম-এর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইমুনা পারভীন টুম্পার পরামর্শে এই জাতের রেনু সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন লিটন। এখন শুধু নিজেই সফল নন, তাঁর দেখাদেখি আশপাশের অনেকেই এই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

তিনি জানান, কয়েকজন শ্রমিকের সহায়তায় মূলত রেনু ও পোনা উৎপাদন করেন তিনি। পরে সেগুলো বড় হয়ে উঠলে তিনটি পুকুরে ছেড়ে বড় করেন এবং বিভিন্ন মাছচাষির কাছে বিক্রি করেন।

তাঁর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে দাদড়া-নারায়ন পাড়ার সাজু ইসলাম, সুকতাহার গ্রামের শামসুদ্দিন ও চক জগদীশপুরের আসাদুজ্জামান রাব্বি জি-থ্রি রুই চাষ শুরু করেছেন।

চাষিদের তথ্য অনুযায়ী, এক বিঘা পুকুরে সঠিক পরিচর্যায় ৮–১০ মাসে ৪০০–৫০০ কেজি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। যার বাজারমূল্য ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। খরচ বাদেও লাভ থাকে প্রায় ৫০–৭০ হাজার টাকা।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, বর্তমানে জয়পুরহাটে প্রায় ২০০ জন মাছচাষি জি-থ্রি রুই চাষ করছেন। তাদের মধ্যে সদর উপজেলার প্রায় ৪০ জন নিয়মিত পোনা চাষ করছেন। জয়পুরহাট সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, “সদরের ভাদসা এলাকার মুজাহিদ হ্যাচারিতে উৎপাদিত রেনু জেলার বিভিন্ন চাষিদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। সাধারণ রুইয়ের তুলনায় জি-থ্রি রুইয়ের গ্রোথ ২৫–৩০ শতাংশ বেশি হওয়ায় অল্প সময়ে ভালো মুনাফা সম্ভব।”

পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও জেআরডিএম-এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় চাষিদের মাঝে রেনু পোনা বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেআরডিএম-এর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইমুনা পারভীন টুম্পা। তিনি বলেন, “জি-থ্রি রুই সাধারণ রুইয়ের তুলনায় দ্রুত বড় হয় এবং নদীর স্বাদের কারণে বাজারে কেজিপ্রতি ২০–৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।”

চাষ সম্প্রসারণে আরও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারি প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের পোনা সরবরাহ এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সহায়তা পেলে জয়পুরহাটে মাছ উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।”

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, “জি-থ্রি রুই মাছ চাষ সময়োপযোগী ও লাভজনক একটি উদ্যোগ। এ চাষের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।”

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০–২১ অর্থবছরে জয়পুরহাট জেলায় নিবন্ধিত মৎস্যজীবীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। ২০২২ সালের পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রায় ৯ হাজার চাষি সরাসরি পুকুরভিত্তিক মাছ চাষে জড়িত। প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জলাশয়ে বছরে ২৫ হাজার টন মাছ উৎপাদিত হয়। জি-থ্রি রুই এই উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে