কুড়িগ্রামের তিনটি বড় নদ-নদী ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের বামতীর, ডানতীর এবং নদী ব্যবস্তাপনার বাপাউবো বিভাগের আওতায় প্রায় দুই হাজার দুই শত একান্ন কোটি টাকার উন্নয়নকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই উন্নয়ন কাজ শেষ হলে জেলার মানুষ বিশেষ ভাবে উপকৃত হবেন। এতে ভাঙনের কবল হতে রক্ষা পাবে কয়েক হাজার বসত বাড়িসহ একাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির ও বড় বড় হাট-বাজার।
এ কাজ গুলো বাস্তবায়িত হলে কৃষি, স্বাস্থ্য, ব্যবসা মিলে উপকৃত হবেন জেলার ১৫ লাখ মানুষ। চলমান এ কাজের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৭২ ভাগ, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী, উলিপুর উপজেলার ডান তীর ভাঙন রোধ প্রকল্পে শতভাগ ভাগ এবং কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার নদের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের ৬১ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
পাউবো অফিস সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ সহ বাম ও ডানতীর সংরক্ষণ প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত) প্রায় ৬২৯ কোটি টাকা ব্যয় উন্নয়ন কাজের ৭২ ভাগ কাজ ইতোমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী, উলিপুর উপজেলার ডানতীর ভাঙন রোধ (প্রথম সংশোধিত) ৪৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯২ শতাংশ। একইভাবে রৌমারী উপজেলার ঘুঘুমারি হতে ফলুয়ার চরঘাট ও রাজিবপুর উপজেলার সদর হতে মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত) ৪৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী সংরক্ষণ কাজের শত ভাগ কাজ শেষ করা হয়েছে। এদিকে কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার নদীর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের ৬৯২ কোটি টাকায় শুরু করা কাজটির ৬১ ভাগ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এই প্রকল্প চারটির কাজ শুরু করে ২০১৯ সাল হতে এবং এই কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুন।
চলমান কাজের বিষয়ে ধরলা নদীর সিএনবি ঘাট এলাকার বাসিন্দা কহিনুর রহমান ও গোলজার হোসেন বলেন, নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে অনেক বসতবাড়ি, স্কুল, মসজিদ ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমরা সবাই আর্থিকভাবে লাভবান হব।
দুধকুমার নদীর তীরবর্তী বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন, সুলতান মাহামুদ ও রাজিয়া বেগম একই বিষয়ে বলেন, দুধকুমার নদীতীর সংস্কার কাজ শেষ হলে আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। এই এলাকার মানুষদের আর ভাঙন আতঙ্কে থাকতে হবে না। সেইসঙ্গে এলাকার কৃষি, শিল্প, সংস্কৃতির স্থায়ী প্রসার ঘটবে।
চিলমারী উপজেলার রমনা ঘাট এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ, জব্বার আলী ও সকিনা বানু বলেন, নদীভাঙন এই এলাকার মানুষের দুঃখের প্রধান কারণ। প্রতি বছর নদীর তীর ভেঙে এই এলাকার অনেক বসতবাড়ি, কৃষিজমি ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অব্যাহত ভাবে বিলীন হয়ে যায়। ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর ও বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ে শেষ হলে আমরা অনেক বেশি উপকৃত হবো। আর রৌমারি উপজেলার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান ও আওরঙ্গজেব বলেন, কাজ সঠিক সময়ে শেষ হলে দীর্ঘ প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা ভাঙনের করাল গ্রাস হতে রেহাই পাব।
রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বামতীর ভাঙন রোধ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, কাজের গুণগতমান ঠিক রেখে প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ সহ বাম ও ডানতীর সংরক্ষণ প্রকল্প এবং দুধকুমার নদীর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, আমরা ধরলা প্রকল্পের প্রায় ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। সময়মতো বাকি কাজও শেষ করা হবে। কাজ শেষ হলে এর শতভাগ সুফল পাবেন ধরলা পাড়ের মানুষজন। অপরদিকে দুধকুমার প্রকল্পের প্রায় ৬১ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে বাকি কাজও দ্রুত শেষ করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর ভাঙন রোধের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর ভাঙন রোধ প্রকল্পের প্রায় ৯৩ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে। বাকি কাজও শেষ করা হবে। এছাড়া কুড়িগ্রাম জেলায় পাউবোর চলমান সব উন্নয়ন কাজ সঠিক সময়ে শেষ করার চেষ্টা আমরা অব্যহত রেখেছি।