বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আনসারের দখলে থাকা শিশুপার্ক দখলমুক্তের দাবিতে সমাবেশ

বিশেষ প্রতিনিধি
  ২৭ মে ২০২৫, ১৭:১৯
আপডেট  : ২৭ মে ২০২৫, ১৭:৩১
আনসারের দখলে থাকা শিশুপার্ক দখলমুক্তের দাবিতে সমাবেশ
ফটো: যায়যায়দিন

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আনসার-ভিডিপির অবৈধ দখলে থাকা শিশুপার্ক অবিলম্বে শিশুদের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেয়ার দাবিতে মঙ্গলবার সকালে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। পার্কটির সামনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচীতে এলাকার প্রায় চল্লিশটি সামাজিক সংগঠন, ক্লাব, বিভিন্ন মসজিদের সদস্য ও কর্মকর্তাবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণ, শিশু-কিশোর ও অভিভাবকরা অংশ নেন।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খিলগাঁও আবাসিক এলাকার পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি মু. হাফিজুর রহমান ময়না। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সমন্বয়ক আউয়াল কামরুজ্জামামান ফরিদ। খিলগাঁও জাগরণী ক্রিকেট একাডেমির চেয়ারম্যান মো. কামরুদ্দীন কাজলসহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

1

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ঢাকা শহরে উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পার্ক, গাছপালা, পুকুর, জলাশয় সব উধাও হয়ে যাচ্ছে। একদিকে কতিপয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী অন্যদিকে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান কর্তারা এই সর্বনাশে লিপ্ত আছে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে বিপন্ন হচ্ছে মানুষ ও প্রকৃতি। বাড়ছে শারীরিক মানসিক অসুস্থা, সংঘাত সহিংসতা। এই শিশুপার্কটি পুরো এলাকায় শিশু-বৃদ্ধ-নারী-পুরুষের জন্য একমাত্র খোলা জায়গা। আনসার বাহিনী অযৌক্তিক ও বেআইনীভাবে এটি বহুবছর দখল করে পুরো এলাকায় দমবন্ধ অবস্থা তৈরি করে রেখেছে। আমরা চাই, পার্কটি দ্রুত দখলমুক্ত করা হোক।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, অবিলম্বে শিশু পার্কটি অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে। আমরা আশা করছি, এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনসার বাহিনী তাদের দখলে থাকা পার্কটি ছেড়ে না দিলে প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারী দিনে-দুপুরে আনসার ও ভিডিপি বাহিনী খিলগাঁও আবাসিক এলাকার ৪৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিশু উদ্যানটি দখল করে। এলাকাবাসীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে আনসার বাহিনী সশস্ত্র পাহারা বসিয়ে প্রায় দুই বিঘা আয়তনের এই পার্কটি চারপাশে টিন দিয়ে ঘেরাও করে। এলাকার প্রতিবাদী লোকজন এতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয় এবং বেশ কয়েকজনকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন পহেলা ফেব্রুয়ারি দৈনিক ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, ডেইলী ষ্টার পত্রিকায় এবং ২ ফেব্রুয়ারী প্রথম আলো, ইনকিলাবসহ একাধিক প্রিন্ট মিডিয়া এবং এনটিভিসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এ সংক্রান্ত খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬১ সালে, নগর পরিকল্পনার মাষ্টার প্লানেও এই জায়গাটি শিশুপার্ক হিসাবে দেখানো আছে। ১৯৮৭ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে পার্শ্ববর্তী আনসার সদর দপ্তরের মহিলা হোস্টেল তৈরীর জন্য এই জমিটি চাওয়া হলে তিনি আনসার বাহিনীকে জমিটি বরাদ্দ দেন। আনসার বাহিনী জমিটি দখলে যেতে চাইলে এলাকার জনগণ লিখিতভাবে আপত্তি জানালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সরেজমিনে জায়গাটি পরিদর্শন করেন এবং উপস্থিত জনগণের সামনে জায়গাটি শিশুপার্ক হিসেবে ব্যবহারের ঘোষনা দেন। ১৯৯৬ সালের ২০ মে তৎকালীন বিচারপতি হাবিবুর রহমান-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই বরাদ্দ বাতিল করে সেখানে শিশুপার্ক ও খেলার মাঠ স্থাপনের নির্দেশ দেন স্মারক নংঃ শা-৭/২ এইচ-৪৭/১৫/৭৮৬ তাং ০৫/০৮/৯৬ এর মাধ্যমে। সেই সময় ওই জমির মালিকানা পূর্ত মন্ত্রণালয় তার নিজের হাতে রেখে কেবল এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে। এই পার্কটি এলাকাবাসীর চিত্তবিনোদন, শিশুদের খেলাধুলা, সামাজিক কর্মকান্ড এবং ঈদের জামাতের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল।

তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আনসার-ভিডিপির অবৈধ দখলে থাকা শিশুপার্ক ৯০ দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করতে ২০১৮ সালের ২ আগস্ট নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এক বছরের মধ্যে দুই বিঘা জমির ওপর থাকা পার্কটি আধুনিক শিশুপার্ক হিসেবে গড়ে তোলারও নির্দেশ দেওয়া হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আনসার ভিডিপি কর্তৃপক্ষ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কতৃপক্ষকে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

আদালতে রিটের পক্ষের শুনানি করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ওই সময় তিনি বলেন, ‘১৯৮৭ সালে আনসার-ভিডিপি কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে খিলগাঁওয়ের ওই শিশুপার্ক লিজ নেয়। ১৯৯৬ সালে সেই লিজ বাতিল করা হয়। এরপর ২০০০ সালে সবুজমতি ট্রাস্টের নামে আবারও লিজ দেওয়া হয়। পরে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে লিজও বাতিল করা হয়। তবে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আনসার-ভিডিপি কর্তৃপক্ষ ক্ষমতার জোরে ওই পার্কটি দখলে নেয়। এরপর ওই বছরেই ১৯৯৬ সালের লিজ বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে আনসার কর্তৃপক্ষ।’

রিজওয়ানা হাসান জানান, ২০০৮ সালে বেলা পার্কটি অবৈধ দখলমুক্ত করার দাবিতে রিট করে। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আনসার কর্তৃপক্ষের আবেদন খারিজ করে পার্কটি ৯০ দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

##########

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে