রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, হাজারীবাগ, চকবাজার, শাহ আলী ও গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। ঈদকে সামনে রেখে মূলত রাতের আধারেই ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিনতাই রোধে নানা পদক্ষেপের কথা বলছে। তবে এখনও দৃশ্যমানভাবে কমেনি ছিনতাই।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। পুলিশের দেওয়া তথ্য শুধু মামলার প্রেক্ষিতে। কিন্তু ছিনতাইয়ের প্রকৃত ঘটনা অনেক বেশি। যার বেশিরভাগই থানায় নথিভুক্ত হচ্ছে না। অধিকাংশ ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করছেন না, কেউ কেউ হারানো বলে জিডি করছেন। যখন শারীরিকভাবে জখম, মারধর কিংবা নিহতের মতো ঘটনা ঘটছে, কেবল সেসব ক্ষেত্রে মামলা বা অভিযোগ জমা পড়ছে থানায়।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝামেলা এড়াতে বেশিরভাগ মানুষ থানা পুলিশকে অবহিত করেন না। আবার কেউ কেউ এ ব্যাপারে মামলা করতে গিয়ে পুলিশি হয়রানির মুখে হতাশ হয়ে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। দুর্বল টহল ব্যবস্থার কারণে ঢাকার রাতের রাজপথ ভয়ংকর হয়ে ওঠার অভিযোগ ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরাসরি স্বীকার না করলেও সম্প্রতি গভীর রাতে কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, রাজধানীর রাস্তা সচরাচর ফাঁকা পাওয়া যায় না। তবে গভীর রাতে রাস্তা ফাঁকা থাকায় অনেকে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। এতে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। এ জন্য রাতে ট্রাফিক পুলিশের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা জরুরি।
পরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, দুর্ঘটনা বেশি ঘটে রাতের বেলাতেই। এ সময় দ্রম্নতগতিতে গাড়ি চালানো হয়। এজন্য পুলিশের দায়িত্বও গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ানো জরুরি। কঠোর ব্যবস্থা না নিলে রাস্তায় গাড়ির বেপরোয়া গতি বন্ধ করা যাবে না বলে মনে করেন তিনি।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতের ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে হলে শুধু পুলিশ পেট্রোল ও পূর্ণাঙ্গ ট্রাফিক ব্যবস্থা করলেই হবে না। অপরাধীদের শনাক্ত করতে ঢাকার রাজপথ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা জরুরি। তা'না হলে দুর্ধর্ষ দুর্বৃত্ত ও বেপরোয়া গাড়িচালকদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের উন্নয়ন বা 'ডেভেলপমেন্ট অব ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম অব ঢাকা' নামে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর যে প্রকল্প রয়েছে তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে এ সংকটের অবসান হতো। এ প্রকল্পের আওতায় রাজধানী ঢাকার ৫০ থানা এলাকায় ১৬ সহস্রাধিক সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা। এর মধ্যে ১৫ হাজার সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করার সুযোগ পাবে পুলিশ। গোটা রাজধানী সিসি ক্যামেরার আওতায় এলে অপরাধ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সহজ হবে। এমনকি গভীর রাতে নির্জনস্থানে অপরাধ সংঘটিত হলেও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা যাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উন্নত দেশের আদলে আধুনিক প্রযুক্তিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় অপরাধ দমন ছাড়াও বিদ্যমান অ্যানালগ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও বদলে ফেলা সম্ভব। উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম, ফেস ডিটেকশন (চেহারা চিহ্নিতকরণ), গাড়ির নম্বর পেস্নট চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি বা এএনপিআরসহ অন্তত ১১ ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়। রাজধানীর কোথাও কোনো বিকট শব্দ হলে তাৎক্ষণিকভাবে কন্ট্রোলরুমে শব্দের বিস্তারিত তথ্যের সিগন্যাল চলে যাবে। ফলে 'শুটিং ইনসিডেন্ট' বা গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে পুলিশ দ্রুততম সময়ে তথ্য পাওয়া সম্ভব। এমনকি কত দূরে গুলি হয়েছে এবং কী ধরনের অস্ত্রের গুলি, তাও চিহ্নিত করা সম্ভব।
ক্যামেরায় থাকবে স্বয়ংক্রিয় এ্যালার্ম সিস্টেম। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা বস্তু ক্যামেরায় ধরা পড়ামাত্র সঙ্কেত বেজে উঠবে। আর সঙ্গে সঙ্গেই কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বরত অপেক্ষমাণ পুলিশ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে। সিসি ক্যামেরা প্রকল্পে ট্রিপল নাইন যুক্ত করা হবে। এতে যে কোনো স্থানে আক্রান্ত বা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি কোনোমতে ফোন তুলে একটি চিৎকার বা 'হেল্প' শব্দ উচ্চারণ করতে পারলেই যথেষ্ট। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ সেখানে পৌঁছে যাবে। সিসি ক্যামেরা প্রকল্প বাস্তবায়নের পর অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা, অবস্থানের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। এটা কাজ করবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য বিশেষ কৌশলের ব্যবস্থা থাকবে, যাতে নিজস্ব ভৌগোলিক লোকেশন ব্যবস্থা বা পিজিআইএস ব্যবহার করবে পুলিশ।