পবিত্র ঈদুল আজহার সরকারি ছুটি ৫ জুন থেকে শুরু হলেও অনেকে এক-দুইদিনের বাড়তি ছুটি নিয়ে আগেই ঢাকা ছেড়েছেন। ১৪ জুন ছুটি শেষ হলেও স্বজনদের সঙ্গে গ্রামে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে বিপুল সংখ্যক চাকরিজীবী মানুষ আর দু'চারদিন পর রাজধানীর কর্মস্থলে ফিরবেন। সব মিলিয়ে অনেক বাড়িই ফাঁকা থাকবে প্রায় ১৫ দিন।
এরইমধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় অনেকের বাড়ির আঙ্গিনা, বাসার ছাদের ফুলের টব ও নির্মাণাধীন ভবনের পানির ট্যাংকিসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি জমেছে।
যা এডিস মশার বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক হওয়ায় তিলোতমা ঢাকা শহরে ডেঙ্গু ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ ঈদের ছুটিতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এমনিতেই ঢাকায় এডিস মশার প্রজনন কেন্দ্র অনেক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক জরিপেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১টি ওয়ার্ড ও উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার উচ্চ ঘনত্বের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর উপর ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে ঢাকার লাখ লাখ ফাঁকা বাসা-বাড়ি, অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি নিঃসন্দেহে আরও বাড়বে।
এ পরিস্থিতিতে নগরবাসী ও ঢাকা সিটি করপোরেশনকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রুপ নেবে।
কীটতত্ত্ববিদরা বলেন, এবারের ঈদের ছুটি ১০ দিন। অথচ, এডিসের বংশ বিস্তারের জন্য এক সপ্তাহই যথেষ্ট। ফলে নতুন প্রজনন উৎস বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেক বেশি। এসব দেখভালের জন্য মনিটরিং সেল থাকলে ঝুঁকি কম হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা নেই।
ছুটির পরে ঘরে ফিরে মশার মারার ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি এডিসের প্রজনন উৎসগুলো ধ্বংস করার পরামর্শ দেন কীটতত্ত্ববিদরা।
একইভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসগুলোকেও বন্ধের পর খোলার আগে মশা নিধনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান তারা।
কীটতত্ত্ববিদ সাইফুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এবং দীর্ঘ ছুটির পর ক্লাস শুরু হওয়ার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মশানিরোধক স্প্রে করতে পারে। এ বিষয়ে আরও সচেতনতা তৈরি করা খুবই প্রয়োজন। কারণ ডেঙ্গু বাংলাদেশে একটি গুরুতর সমস্যা', বলেন তিনি।
ছুটির পর সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে সাইফুর রহমান আরও বলেন, সিটি করপোরেশনকে তাদের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, নির্মাণকাজ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকায় নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করবে। তাই ওই সাইট ও ভবন সংলগ্ন স্থানগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
নির্মাণাধীন ভবন বা সংলগ্ন স্থানের বাসিন্দাদের এডিসের প্রজনন উৎস ধ্বংস করার উদ্যোগ নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এডিস লার্ভা ধ্বংস করার জন্য জমে থাকা পানিতে কেরোসিন বা ব্লিচিং পাউডার দেওয়া যেতে পারে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যে করপোরেশনের কর্মীরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময়ে মশার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তার আশপাশের অনেক বাড়ির ছাদে বৃষ্টির পানি জমে আছে। কারো কারো ফুলের টবেও পানি রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে গ্রামে যাওয়ায় বৃষ্টির জমে থাকা পানি পরিস্কার করার কেউ নেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের আগে পাড়া-মহল্লায়, মসজিদে নগরবাসীকে নিজ বাসাবাড়ি পরিষ্কার করে এবং কোথাও যেন পানি না থাকে, তা দেখে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। এখনও অনুরোধ থাকবে, তারা যেন ঢাকা ফিরেই ভবনের বেজমেন্ট থেকে ছাদ পর্যন্ত প্রতিটি স্থান, কোণা ভালো করে পরীক্ষা করে দেখেন পানি জমে আছে কিনা।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঈদের ছুটি অল্প কয়েকদিন তাদের মশক নিধন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তা ছাড়া ঈদের আগে ও পরে ফগিং ও লার্ভিসাইডিং কার্যক্রম চালু ছিল।