শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
করোনা বাড়লেও সচেতনতা বাড়েনি

সাধারণ মানুষের অজ্ঞতায় সংক্রমণ দ্রুত বাড়ার শঙ্কা

সাখাওয়াত হোসেন
  ১১ জুন ২০২৫, ১৮:১৯
আপডেট  : ১১ জুন ২০২৫, ১৮:২৬
সাধারণ মানুষের অজ্ঞতায় সংক্রমণ দ্রুত বাড়ার শঙ্কা
ছবি: লোগো

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়েনি। এ সময় যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কারো। এমনকি মাস্ক পরতেও অনাগ্রহ প্রায় সবার। ফলে সংক্রমনের হার সহসাই উর্ধ্বমুখী হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

1

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘সংক্রমণের হার এখনও ১৫ শতাংশের নিচে। এটি ২০ শতাংশের বেশি হলে অবশ্যই বিধিনিষেধ দেয়া হবে। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এদিকে সম্প্রতি বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সচেতনতা সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেকের ধারণা, করোনার টিকা নেয়ার ফলে মাস্ক পরার দরকার নেই। যেহেতু বুষ্টার ডোজ আগেই নেওয়া হয়ে গেছে, তাই নতুন করে টিকা নেওয়ার দরকার হবে না।

লঞ্চে গাদাগাদি করে বরিশাল থেকে ঢাকায় ফেরা মুগদার বাসিন্দা সোহরাব মিয়াকে মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মরণ যখন আসবে তা কেউ ঠেকাতে পারবে না। মাস্ক পরলেই কী করোনা ঠেকানো যাবে? মাস্ক পরে কী হবে? কিছুই হবে না। কপালে যা আছে তাই হবে।’ একই লঞ্চের আরেক যাত্রী নূরুন নাহার জানান, তিনি তিন ডোজ টিকাও নিয়েছেন। তাই তার মাস্ক পরার দরকার নেই। পেশায় শিক্ষিকা এই নারীর ভাষ্য, যারা বুস্টার ডোজ নেননি, তাদের মাস্ক পরা জরুরি। করোনার এই উর্ধ্বমুখী প্রবণতায় তিনি নতুন করে আর টিকা নেবেন কিনা তা জানতে চাইলে ‘না’ সূচক মন্তব্য করেন।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেনের সঙ্গে। মুখে মাস্ক নেই কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরতে ভুলে গেছি। অনেক দিন অভ্যাস নেই তো, তাই মাঝে মাঝে ভুলে যাই।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম জানান, মাস্ক পরার এখনও সময় হয়নি। করোনা আরও বাড়লে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

শুধু সোহরাব মিয়া, জুবায়ের হোসেন কিংবা নজরুল ইসলামই নন, মাস্ক পরা নিয়ে উদাসীনতা রয়েছে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই।

মঙ্গল ও বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল, মগবাজার, রামপুরা, মিরপুর ও খিলগাঁও সহ নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে মানুষের মাস্ক না পরার এমন প্রবণতার চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে মাস্ক নিয়ে মানুষের উদাসীনতা যে আগের মতই রয়ে গেছে তা স্পষ্ট হয়েছে মাস্ক বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে। তারা জানান, করোনার উর্ধ্বমুখী প্রবণতার পরও মাস্ক বিক্রি বাড়েনি। আগের মতই খুব স্বল্প পরিমাণ মাস্ক বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে মালিবাগ বাজার সংলগ্ন রাজ ফার্মেসীর সেলসম্যান জাহিদুল হাসান বলেন, আগে প্রতিদিন যে সংখ্যক মাস্ক বিক্রি হতো, গত কয়েকদিন ধরে তা সামান্য বেড়েছে। তবে তা ধরার মতো না। একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মগবাজারের নূর ফার্মেসির মালিক এমরান হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগের মতোই মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। মানুষ ধারণা করছে, টিকা যেহেতু নেয়া হয়েছে তাই মাস্ক পরার দরকার নেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, করোনা বাড়লেও মানুষের উদাসীনতা রয়েই গেছে। সারা দেশেই মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এ ছাড়া ঈদযাত্রায় মানা হচ্ছে না সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব। ফলে সংক্রমন আরও উর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে শনাক্তের চেয়ে প্রকৃতপক্ষে সংক্রমণ আরও অনেক বেশি বলেও মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, ‘প্রতিদিন যে সংক্রমণের হার দেখা যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে সংক্রমণ আরও বেশি। একজনের শনাক্ত হলে, আরও পাঁচজন শনাক্তহীন হয়ে ঘুরে বেড়ায়।’

করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটির সদস্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এর জন্য সরকার থেকে জোরালো নির্দেশনা থাকতে হবে। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সংশ্লিষ্টতাও নিশ্চিত করতে হবে। যাতে জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানতে আগ্রহী হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে সবধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে, পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোভিডের পাশাপাশি রোগীর অন্যান্য ক্লিনিক্যাল অবস্থা মোকাবিলার সক্ষমতা থাকতে হবে। আইসিইউয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমরা গত বছরেও দেখেছি, এক হাসপাতালে আইসিইউ না পেয়ে রোগীকে অন্য হাসপাতালে যেতে হয়েছে। এবার যেন সে পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দীর্ঘদিন করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যা করণীয় সেটি করা হচ্ছে। চিঠি দিয়ে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে সারা দেশের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে