মধ্যপ্রাচ্যের জ্বলন্ত উত্তেজনা অবশেষে সরাসরি সামরিক সংঘাতে রূপ নিল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ঘোষণা করেছে, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত ইরান তাদের দিকে ১০০টিরও বেশি আত্মঘাতী ড্রোন ও যুদ্ধ ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। প্রতিটি ড্রোন লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি, বিমানবন্দর ও কৌশলগত স্থাপনাগুলো।
এই হামলার মাত্রা, ব্যাপকতা ও সময়কাল এমনভাবে পরিকল্পিত যে এটি “পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের ইঙ্গিত” বলেই মন্তব্য করছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
দু’দিন আগে ইসরায়েল ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র নাতানজসহ একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে বড় ধরনের বিমান হামলা চালায়। ঐ হামলায় ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার হোসেইন সালামি নিহত হন। এর জবাবে, ইরান শুক্রবার গভীর রাতে "অপারেশন রাইজিং লায়ন" নামক প্রতিশোধ অভিযান শুরু করে।
ড্রোন ঝড়: ইরানের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে রাত সাড়ে ১১টার পরপরই ধারাবাহিকভাবে আকাশে ড্রোন উড়ে যায় ইসরায়েলের দিকে। হামলায় শাহেদ সিরিজ সহ উন্নত মানের ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয়: আয়রন ডোম (Iron Dome), ডেভিডস স্লিং (David’s Sling), অ্যারো সিস্টেম—এই তিন স্তরের রক্ষা বলয় চালু করা হয়েছে। তবে এই পরিমাণে ড্রোন প্রতিহত করতে যথেষ্ট চাপ পড়েছে বলে জানা গেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন (Brig. Gen. Effie Deffrin) এক সরকারি বিবৃতিতে জানান, “গত কয়েক ঘণ্টায় ইরান ইসরায়েলের দিকে ১০০টিরও বেশি ড্রোন পাঠিয়েছে। আমাদের সমস্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে এবং প্রতিটি হুমকি প্রতিহত করার চেষ্টা চলছে।” এই বিবৃতিটি ইঙ্গিত করে যে, যুদ্ধ পরিস্থিতি কেবল সীমানা লঙ্ঘন করেনি, বরং এখন ইসরায়েল সরাসরি আক্রমণের মুখোমুখি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেন, “আমরা আমাদের ভূখণ্ড, জনগণ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যেকোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত। এই যুদ্ধ আমরা চাপিয়ে দেইনি, তবে এর জবাব আমরা নির্ভয়ে দেব।”
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েলের সরাসরি যুদ্ধ শুধুমাত্র এই দুটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।
লেবাননের হিজবুল্লাহ, সিরিয়ার প্রক্সি গ্রুপ, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা এখন জোটবদ্ধভাবে ইসরায়েলকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে।
ফলে এই যুদ্ধ দ্রুতই বৃহৎ আঞ্চলিক সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের জনজীবন কার্যত অচল হয়ে গেছে। দেশজুড়ে স্কুল, কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিমানবন্দর ও রেল পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। অধিকাংশ শহরে বোমা-আশ্রয় কেন্দ্রে নাগরিকদের অবস্থান।