পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলা মূলত কাঁচা ফল ও কাঠের ব্যবসার জন্য প্রসিদ্ধ, তবে প্রতি বছরে গুলোতে তরমুজের ভাসমান হাট বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ হাট মূলত সন্ধ্যা নদীর শাখা খাল মিয়ারহাট বন্দর সংলগ্ন বসে, যেখানে কৃষকরা ট্রলারে করে তাদের তরমুজ বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।
নেছারাবাদের তরমুজের ভাসমান হাট সাধারণত বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে বসে, কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের কারণে এবারে তরমুজের ভাসমান হাট বসে ফাল্গুন মাসের শেষ এবং পুরো চৈত্র মাস। কৃষকরা খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে ট্রলারে করে তরমুজ নিয়ে আসেন। ক্রেতারাও নদীপথে ট্রলার নিয়ে এসে কিনে থাকেন, ফলে পুরো বাজারটি জলপথকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে।
এই হাটের প্রধান আকর্ষণ হলো বিশাল আকারের ট্রলার ভর্তি তরমুজের সারি, যা দূর থেকে দেখতেই মনোমুগ্ধকর লাগে। ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে তরমুজ কেনাবেচা করেন, যা পরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়।
নেছারাবাদের এই ভাসমান হাট শুধু স্থানীয় কৃষকদের জন্য নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর লক্ষাধিক মণ তরমুজ এই হাট থেকে বিক্রি হয়, যা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এতে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পান এবং সরবরাহকারীরাও লাভবান হন।
এই ভাসমান হাট শুধু ব্যবসায়ীদের জন্য নয়, পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয়। অনেকেই নদীর বুকে নৌকায় চড়ে তরমুজের কেনাবেচা দেখতে আসেন। একদিকে তরমুজের লাল-সবুজ রঙ, অন্যদিকে নদীর শান্ত জলরাশি – সব মিলিয়ে এক মনোরম দৃশ্য সৃষ্টি হয়।
তবে, কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কখনো কখনো বাজারে অতিরিক্ত তরমুজ আসায় দাম কমে যায়, ফলে কৃষকদের লোকসান হয়। এছাড়া, সংরক্ষণ ও পরিবহনের সমস্যা থাকায় অনেক তরমুজ নষ্ট হয়ে যায়।
নেছারাবাদের মিয়ারহাট বন্দরে তরমুজের ভাসমান হাট শুধু একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র নয়, এটি এ অঞ্চলের সংস্কৃতি ও অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উপযুক্ত পরিকল্পনা ও আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে এই হাটকে আরও প্রসারিত করা সম্ভব, যা স্থানীয় কৃষকদের আরও লাভবান করবে এবং পর্যটন শিল্পকেও সমৃদ্ধ করবে।
যাযাদি/ এস