আগামী অর্থবছরে স্টিল পণ্য, বিশেষ করে রডের দাম বাড়তে পারে। কারণ, সরকার আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ৪০ শতাংশের বেশি—আমদানিতে ২০–২৩ শতাংশ ও উৎপাদনে ২০ শতাংশ—বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি বাতিল হতে পারে বিদ্যমান ফিক্সড আমদানি শুল্ক।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র অনুযায়ী, এ পদক্ষেপ কার্যকর হলে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি টনে রডের দাম বাড়তে পারে প্রায় ১ হাজার ৪০০ টাকা। বর্তমানে স্টিলের মূল কাঁচামাল স্ক্র্যাপ আমদানিতে প্রতি টনে ফিক্সড শুল্ক আদায় করা হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যদিকে স্টিল থেকে বিলেট ও রড উৎপাদনে প্রতি টনে ফিক্সড ভ্যাট ২ হাজার ২০০ টাকা। সবমিলিয়ে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট মিলিয়ে সরকার প্রতি টনে পাচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা। প্রস্তাবিত শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধি কার্যকর হলে এর পরিমাণ ৫ হাজার টাকা বা তার বেশি হতে পারে।
এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'বর্তমানে বাজারে প্রতি টন রডের দাম প্রায় ৯০ হাজার টাকা। এনবিআর প্রতি টনে মাত্র ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে—যেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের হিসাবে এই পরিমাণ হওয়া উচিত ছিল প্রায় ৫ হাজার ০০০ টাকা।'
তিনি আরও বলেন, 'ফলে আমরা মনে করছি, সরকার এই খাতে সঠিক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য কর কিছুটা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।'
তবে শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্টিলের ওপর বাড়তি আমদানি কর ও ভ্যাট কমানো উচিত। তা না করে কর বাড়ালে তা এ খাতের জন্য 'বিপর্যয়কর' হবে। বাংলাদেশ স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, 'সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প কমে যাওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে দাম বেড়ে যাওয়ায় স্টিল ও রডের চাহিদা কমেছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ। কর যদি এত বেশি হারে বাড়ানো হয়, তা এই খাতের জন্য বিপর্যয়কর হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এত বেশি হারে ভ্যাট ও এআইটি বাড়ানো হলে দাম বেড়ে যাবে, তাতে সাধারণ ভোক্তার কেনা কমে যাবে। ফলে ব্যক্তি, বেসরকারি খাত ও আবাসন খাতে চাহিদা কমবে—যা আরেক দফা এই খাতে হুমকির মুখে ফেলবে।'
একই সুরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন দেশের অন্যতম প্রধান স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিল লিমিটেডের (বিএসআরএম) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, 'নির্মাণ খাত এখন কঠিন সময় পার করছে। এভাবে ঢালাও কর বাড়ানো হলে ভোক্তার খরচ বেড়ে যাবে প্রতি টনে ১ হাজার টাকার বেশি।'
শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু স্টিল ব্যবহার এখনও অনেক কম। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়বে।
বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু স্টিল ব্যবহার প্রায় ৫৫ কেজি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৯৫ কেজিতে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। অন্যদিকে ভারতে মাথাপিছু স্টিল ব্যবহার ৯৩.৪ কেজি, জাপানে ৪৩২.৫ কেজি ও যুক্তরাষ্ট্রে ২৬৬.৩ কেজি।