বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাজেটে বৈষম্য কামনোর রোড ম্যাপ নেই

জনতুষ্টি পূরণে ক্ষীণ আশা

সাখাওয়াত হোসেন
  ০২ জুন ২০২৫, ০৯:৫৭
আপডেট  : ০২ জুন ২০২৫, ১০:১৬
জনতুষ্টি পূরণে ক্ষীণ আশা
গ্রাফিক্স : যায়যায়দিন

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের ইঙ্গিত থাকলেও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এটি যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কেননা বৈরী পরিবেশে বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগে মন্থরগতি।

নতুন বিনিয়োগে আস্থাহীনতা। কর্মসংস্থানের অভাবে দরিদ্রতা বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাত ও জ্বালানি খাতের ভঙ্গুর ব্যবস্থাপনায় ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব চলছেই।

1

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫১ হাজার কোটি টাকা বেশি।

তবে উন্নয়ন ব্যয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে, যা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে পারে ।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের বছরের ৬.৭৫ শতাংশ থেকে কম। এছাড়া, মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যদিও এপ্রিল মাসে এটি ৯.১৭ শতাংশ ছিল ।

অর্থনীতিবিদদের অভিমত, রাজস্ব আয় জিডিপির তুলনায় কম এবং কর কাঠামোতে পরোক্ষ করের উপর নির্ভরতা বেশি। এছাড়া, বাজেট ঘাটতি পূরণে দেশি-বিদেশি ঋণের উপর নির্ভরতা বাড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে ।

সরকার সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে, যাতে নিম্ন আয়ের জনগণ উপকৃত হয়। তবে, অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন, বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের জন্য । যা এ বাজেটে করা হয়নি।

বাজেট প্রণয়নে স্বচ্ছতার অভাব এবং বাস্তবায়নে দুর্বলতা অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগের কারণ। তারা সুপারিশ করেছেন যে, বাজেট বাস্তবায়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি ।

সামগ্রিকভাবে, অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে, বাজেটটি কিছু ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে, তবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এটি পর্যাপ্ত নয়। বাজেটের সফল বাস্তবায়নের জন্য স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।

অর্থনীতিবিদদের বলছেন, রাজনীতিতে নির্বাচনী শোরগোল আর অর্থনীতিতে নানা সংকটের বলয় ভেঙে আগামী বাজেট মানুষকে কতটা সন্তুষ্ট করতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেননা বৈরী পরিবেশে বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগে মন্থরগতি। নতুন বিনিয়োগে আস্থাহীনতা। কর্মসংস্থানের অভাবে দরিদ্রতা বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাত ও জ্বালানি খাতের ভঙ্গুর ব্যবস্থাপনায় ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব চলছেই।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, স্বাধীনতা-পরবর্তী এবারই প্রথম আগের অর্থবছরের চেয়ে ছোট বাজেট হচ্ছে। এই বাজেটে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। ফলে জনপ্রত্যাশা পূরণে উন্নয়নে খুব বেশি নজর দেওয়ার সুযোগ পাবে না সরকার।

তবে এবার পরিচালন ব্যয়ে বেশ চাপে আছে সরকার। পরিচালন ব্যয় পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। যা আগের বছরের চেয়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বেশি। এর নেপথ্য সুদ ও বেতন-ভাতার ব্যয় বৃদ্ধি।

সুদ পরিশোধ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় দুই লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা আগামী বছরে ব্যয় করতে হবে। পাশাপাশি ভর্তুকি ব্যয় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক সুরক্ষায় বড় ব্যয় হবে।

দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এসব ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। কারণ চলতি অর্থবছরেও তেমন রাজস্ব বাড়াতে পারেনি। ন্যূনতম বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দার প্রভাবে আগামী অর্থবছরেও রাজস্ব আয় হুমকিতে পড়তে পারে। ফলে নতুন বাজেটে পদক্ষেপ নিতে পারছে না সরকার। এর পরও আগামী বাজেটে সরকার বিনিয়োগে উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে, যা জিডিপির ৩০.২৫ শতাংশ।

সরকার চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বড় ঘাটতির মুখে রাজস্ব আয়। ব্যবসার মন্দা পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকার এনবিআর থেকে উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আরো চ্যালেঞ্জে ফেলে দেবে।

সরকার ঘাটতি মোকাবেলায় অভ্যন্তরীণ উৎস্য থেকে ঋণ কমালেও বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা বাড়িয়েছে। সে ক্ষেত্রেও অর্থায়ন ঘাটতি মেটাতে বড় ধরনের শঙ্কা আছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বৈষম্য কমাতে নতুন কোনো রোডম্যাপ থাকছে না। নেই কোনো চমক। অনেকটা গতানুগতিক ধারার বাজেট হচ্ছে। ফলে জনতুষ্টি পূরণ অনেকটা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফল পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, আগামী বাজেট পতিত সরকারের আদলেই হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে দু-চার টাকা হেরফের ছাড়া বাজেটে তেমন বড় কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সরকারের কাজে জনগণের যে প্রত্যাশা, তা পূরণে কিছু থাকছে বলে মনে হয় না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে