ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে, আর তারই মধ্যে উভয় দেশের সাধারণ জনগণকে পড়তে হয়েছে মারাত্মক অর্থনৈতিক চাপের মুখে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক রাজনীতির অধ্যাপক নাদের হাবিবি আল জাজিরাকে বলেন, “ইরানে অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল, এখন আরও খারাপ হচ্ছে। যাদের সামর্থ্য ছিল তারা তেহরান ছেড়ে চলে গেছে। ফলে আশেপাশের প্রদেশগুলোতে জনসংখ্যার চাপ বেড়েছে। কিন্তু যাদের যাওয়ার সামর্থ্য নেই, তারা এখনো তেহরানে থেকেই অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন।”
অধ্যাপক হাবিবি আরও বলেন, ইসরায়েলের অর্থনীতিও এখন বিপর্যয়ের মুখে। চলমান সংঘাত দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যাহত করছে। তিনি বলেন, “এবারের সংঘাত ইসরায়েলের পূর্ববর্তী যেকোনো যুদ্ধের চেয়ে ভিন্ন ধরনের এবং তার প্রভাবও অতীতের তুলনায় অনেক গভীর। এর ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম নজিরবিহীনভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে।”
চলমান যুদ্ধ ও তার প্রভাব
গত দুই সপ্তাহ ধরে ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের ওপর সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে উভয় দেশের সামরিক ও বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হলে তা শুধু সামরিক নয়, বরং অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয়েও রূপ নিতে পারে। যুদ্ধের কারণে বাজার ব্যবস্থা ধসে পড়ছে, ব্যাংকিং ও আর্থিক লেনদেনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠেছে।
ইরানে আগে থেকেই কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে গিয়েছিল। যুদ্ধের ফলে খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ও ওষুধের দাম আরও বেড়েছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, আর নতুন চাকরির সুযোগ একপ্রকার শূন্যে এসে ঠেকেছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলে টেল-আভিভ, হাইফা ও অন্যান্য প্রধান শহরে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্কুল, হাসপাতাল ও পরিবহন ব্যবস্থাও ক্ষতির মুখে পড়েছে।
ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে বাড়তি ব্যয় ও অস্থিরতার মুখোমুখি হতে হতে পারে যদি এই সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়।
বিশ্লেষকদের আহ্বান, যুদ্ধ অবসানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা জরুরি। এতে শুধু ইরান ও ইসরায়েল নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মহল এই সংঘাত নিরসনে এখনো কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি, তবে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শান্তি আলোচনার আহ্বান অব্যাহত রয়েছে।
এই মুহূর্তে যুদ্ধ থামার কোনো সুস্পষ্ট ইঙ্গিত না থাকায় সাধারণ মানুষ ও বাজার ব্যবস্থা আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে রয়েছে।