এনবিআর দাবি করছে, এখন থেকে নিবাসী ও অনিবাসী যে কেউ ২১ ধারায় আইনের আওতায় আসবেন। ধারাটি সংশোধনের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপ ও সামিটসহ এ ধরনের করদাতাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগের আইন অনুযায়ী শুধু বাংলাদেশীদের ওপর ২১ ধারার জরিমানা আরোপ করা যেত। কেউ নাগরিকত্ব ত্যাগ করলে বা কোনো বাংলাদেশী বিদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে এ ধারা প্রয়োগ করা যেত না বা করলেও তা অবৈধ হতো।
অর্থ অধ্যাদেশে (২০২৫) বলা হয়েছে, ধারা ২১-এর উপধারায় (১) ‘নিবাসী বাংলাদেশী’র পরিবর্তে ‘করদাতা বা জন্মসূত্রে বাংলাদেশী ছিলেন বা আছেন’ শব্দগুলো সন্নিবেশিত হবে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আয়কর পরিপত্রে ‘করদাতা বা জন্মসূত্রে বাংলাদেশী ছিলেন বা আছেন’ বিষয়ে আরো ব্যাখ্যা থাকবে। সেখানে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিধানটির কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে তা অর্থ পাচার ও বিদেশে অবৈধভাবে সম্পদ গড়ে তোলা ঠেকানোর ক্ষেত্রে কার্যকর হাতিয়ার হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। যদিও এনবিআরের পক্ষে গত তিন বছরে আইনের বিধানটির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়নি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এনবিআরের গোয়েন্দা দল সিআইসি তৎপর হয়। তাদের কয়েকটি টিম কয়েকটি দেশে সম্পদ খুঁজতে গিয়েছিল।
আয়কর আইনের ২১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিবাসী (১ জুলাই থেকে হবে করদাতা বা জন্মসূত্রে বাংলাদেশী) কোনো করদাতার বিদেশে অপ্রদর্শিত সম্পদের তথ্য থাকলে তা নিয়ে দেশে-বিদেশে অনুসন্ধান চালাতে হবে। অনুসন্ধানে আয়কর নথিতে অপ্রদর্শিত বিদেশী সম্পদের সন্ধান ও প্রমাণ পাওয়া গেলে এর বাজারমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করার কথাও বলা হয়েছে। এমনকি এক্ষেত্রে অভিযুক্তের নিজের বা তার পক্ষের অন্য কারো সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেও এ জরিমানা আদায় করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এনবিআরের সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম বলেন, ‘নিবাসী শব্দের কারণে অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়, এমন অভিযোগ ওঠার কারণে এবার পরিবর্তন করে জন্মসূত্রে বাংলাদেশী শব্দ যোগ করা হয়েছে। এখন নিবাসী ও অনিবাসী জন্মসূত্রে বাংলাদেশী যে কারোরই বিদেশে সম্পদ থাকলে রিটার্নে প্রদর্শন করতে হবে। না করলে জরিমানার আওতায় আসবেন।’
আইনে ‘জন্মসূত্রে বাংলাদেশী’ বিষয়টি ১ জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে, সেক্ষেত্রে যারা তার আগে ‘নিবাসী’ শব্দের মারপ্যাঁচে বিদেশে থাকা সম্পদ রিটার্নে দেখাননি তাদের ক্ষেত্রেও এখন ২১ ধারা প্রয়োগ করা যাবে বলেও জানান এ কে এম বদিউল আলম।
মূলত নিবাসীও নয় আবার বাংলাদেশের নাগরিকও নয় এমন ব্যক্তিদের করের আওতায় আনতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয়কর আইনে ২১ ধারাটি যুক্ত করা হয় বলে জানান এনবিআরের এ সদস্য।
আইনে বিধানটি যুক্ত হওয়ার পর তিন বছর শেষ হওয়ার পথে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বিধানটির আওতায় একটি অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। যদিও এ সময় অনেক বাংলাদেশীর বিদেশে অবৈধভাবে সম্পদ গড়ে তোলার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রমাণসহ বহু তথ্য গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বারবার আলোচনায় এসেছে। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) ধারাটির প্রয়োগ নিশ্চিত করার কথা।
তবে সিআইসি মহাপরিচালক আহসান হাবিব বলেন, ‘২১ ধারা শুধু সিআইসি নয় সব কর অঞ্চলই প্রয়োগ করতে পারে। এ ধারা প্রয়োগের জন্য সিআইসির সদস্যরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে সম্পদ শনাক্ত করেছেন।’
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘এটা খুবই গোপনীয়, মুখস্থ বলা যাচ্ছে না। কী পরিমাণ সম্পদ শনাক্ত করেছে, পরে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলগুলো থেকে কী পরিমাণ কর আদায় হয়েছে; সে বিষয়ে আমরা শিগগিরই গণমাধ্যমকে জানাব। বাজেটটা শেষ হোক, একটু অপেক্ষা করুন।’
আয়কর কনসালট্যান্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, ‘এ বিধান আয়কর রিটার্নে সম্পদ প্রদর্শনের বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন, যাতে উদাহরণ তৈরি হয় যে কর ফাঁকিদাতাদের জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু যারা এরই মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন, তাদের কাছ থেকে কীভাবে কর আদায় করা হবে এ প্রশ্ন থেকেই যায়।’