রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

এআইয়ের জাদু! বোবা মানুষ এখন কথা বলবে

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ জুন ২০২৫, ১৯:৩১
আপডেট  : ২২ জুন ২০২৫, ১৯:৩৪
এআইয়ের জাদু! বোবা মানুষ এখন কথা বলবে
ছবি: সংগৃহীত

যিনি একসময় কথা বলতেই পারতেন না, আজ তিনি আবার কথা বলছেন—তাও রিয়েল টাইমে। শুধু তা-ই নয়, গাইছেন গানও। আর এই অবিশ্বাস্য সাফল্যের পেছনে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির এক বিস্ময়—মস্তিষ্ক-নিয়ন্ত্রিত কৃত্রিম কণ্ঠস্বর ব্যবস্থা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এই প্রযুক্তির উন্নয়ন করেছেন। তাদের দাবি, এটি এমন এক সিস্টেম যা মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপিত ইলেকট্রোড ব্যবহার করে স্নায়ুর সংকেত সংগ্রহ করে। এরপর সেই সংকেত এআই বিশ্লেষণ করে তাৎক্ষণিকভাবে রূপ দেয় কণ্ঠস্বর ও বাক্যে।

গবেষক সের্গেই স্ট্যাভিস্কি বলেন, “এটি প্রথম প্রযুক্তি যা মাত্র ২৫ মিলিসেকেন্ডে প্রতিক্রিয়া দিতে পারে। আগের যেকোনো প্রযুক্তির চেয়ে অনেক দ্রুত ও কার্যকর।”

এই প্রযুক্তির সাহায্যে কথা বলতে শুরু করেছেন এক ব্যক্তি, যিনি ‘অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস’ (ALS) রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন।

তার নাম গোপন রাখা হলেও তিনি জানিয়েছেন, “এই কণ্ঠ আমার নিজের কণ্ঠ বলেই মনে হয়। আমি আনন্দিত।”

ওই ব্যক্তির মস্তিষ্কের সেই অংশে ২৫৬টি ইলেকট্রোড বসানো হয়েছে, যেখান থেকে মুখ ও কথার পেশি নিয়ন্ত্রিত হয়।

এরপর তাকে স্ক্রিনে বিভিন্ন বাক্য দেখিয়ে জোরে বলার অনুরোধ করা হয়—যদিও তিনি বাস্তবে শব্দ উচ্চারণ করতে পারতেন না।

তার স্নায়বিক সংকেত রেকর্ড করে তৈরি করা হয় একটি এআই মডেল, যা শেখে—কোন সংকেত কোন শব্দ বোঝায়।

এই এআই তারপর রিয়েল টাইমে কৃত্রিম কণ্ঠস্বর তৈরি করে কথা বলে।

আরও চমকপ্রদ বিষয় হলো, গবেষকেরা ওই ব্যক্তির পুরনো আসল কণ্ঠস্বরের রেকর্ডিং ব্যবহার করে এআই কণ্ঠস্বরকে তার মতো করে সাজিয়েছেন। ফলে কৃত্রিম কণ্ঠ নয়, শুনতে ঠিক যেন তার নিজের কথা।

এমনকি সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গান গাওয়াও সম্ভব হয়েছে এই প্রযুক্তিতে।

গবেষক ডেভিড ব্র্যান্ডম্যান বলেন, “তিনি অত্যন্ত মেধাবী একজন মানুষ। এখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছেন, কথা বলছেন।”

এই প্রযুক্তিকে বলা হচ্ছে ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI)। আগেও এমন প্রযুক্তি ছিল, তবে সেগুলোর প্রতিক্রিয়া পেতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগত—যা সাধারণ কথোপকথনের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াত।

নতুন প্রযুক্তি সেই সীমাবদ্ধতা ভেঙে দিয়েছে। এখন আর প্রতিটি প্রশ্ন-উত্তরের মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি নেই। কথাবার্তার স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা ও গতি বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ইলন মাস্কের ‘নিউরালিংক’ নামের প্রতিষ্ঠানও একই ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। সেখানে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরা কেবল চিন্তা করেই কম্পিউটারের মাউস নিয়ন্ত্রণ করছেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আরও উন্নত হলে মানুষ চিন্তা করেই কথা বলে ফেলতে পারবে। এটি শুধু বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য নয়, চিকিৎসা, যোগাযোগ, এমনকি শিক্ষা ও সৃজনশীলতার জগতে এক নতুন বিপ্লব ঘটাতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে