মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ার শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে আন্তর্জাতিক মানের একটি কন্টেইনার পোর্ট নির্মাণ করা হবে। এটি হবে বিশেষ ভাবে সৌন্দর্যমন্ডিত।
রোববার (২২ জুন) বিকেলে সরকারের স্বরাষ্ট্রসহ পাঁচ উপদেষ্টা শিমুলিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউিটিএ’র ড্রেজার বেইজ ভবনের সন্মেলন কক্ষে এক যৌথ সাভা শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে একথা বলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তণ মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বানিজ্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয় এবং বেসাময়িক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন।
এর পূর্বে গত বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন শিমুলিয়া ঘাটে এসে বন্দর নিয়ে মহাপরিকল্পনার কথা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার বন্দর পরিকল্পনা নিয়ে গুরুত্বপর্ণ এই সভা হয়।
এর আগে মুন্সীগঞ্জে তিন উপদেষ্টার উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত শিমুলিয়া ফেরিঘাটকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন হাব করার প্রস্তাব পেশ করেন। বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা যেসব পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন, তা হলো - শিমলিয়া ঘাটে জেটি স্থাপন ও সার্বক্ষণিক একটি ফেরি থাকবে। এছাড়া শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে পদ্মা সেতু ঘিরে পর্যটন হাব এবং ইকো পোর্ট গড়ে তোলার মাস্টারপ্ল্যান বৃহস্পতিবার উপস্থাপন করে বিআইডব্লিউটিএ।
যেখানে থাকবে- নদী থেকে সংগহীত বিভিন্ন জীব-বস্তু নিয়ে রিভার মিউজিয়াম, নদীর পাড়ে রাতযাপনের জন্য ইকো রিসোর্ট, অবকাশ যাপনের জন্য সুইমিং পুল, শিশুদের উপভোগ্য কিডস জোন, শিমুলিয়া ঘাটের পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে নদীতীরে একটি নান্দনিক ও আধুনিক ফেরিঘাট স্থাপন। কারণ বিশ্বের বড় বড় সেতুর সাথে ফেরিঘাটও রাখা হয় বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে।
৪টি জোনে ভাগ করে থাকবে মোংলা বন্দরের আদলে ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল ও বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব আইটি ভবন, জোন-বি’তে থাকবে ট্রাক পার্কিং এড়িয়া, ‘জোন-সি’তে থাকবে এডমিনিস্ট্রিভ এড়িয়া, জোন-ডি’তে থাকবে ফেরিঘাটের জন্য বাস পার্কিং। এছাড়া থাকবে ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে।
তবে গতকালের সভা শেষে তিনি জানান, এখানে সরকারীভাবে একটি আন্তর্জাতিক মানের কন্টেইনার পোর্ট নির্মাণ করা হবে। যেটি হবে নান্দনিক। এই এলাকায় যখন একটি পোর্ট হবে সেটি মুন্সীগঞ্জবাসীর জন্য একটি বড় যজ্ঞ হবে। শুধু পোর্ট নয়, এর বাইরেও সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া কেউ যতি পকিল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসে তবে যৌক্তিক হলে আমরা তার পরিকল্পনা গ্রহন করবো। এবং পিপিপি এর আওতায় হতে পারে।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তণ মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এ এলাকায় চলমান নদী শানের কাজ চলছে। বর্তমানে ৫৫ ভাগ শেষ হয়েছে। ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মধ্যে এ নদী শাসনের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের সারসংক্ষেপ হিসেবে জানা যায় প্রকল্পটির প্রকল্পের বিনিয়োগ খরচ ধরা হয়েছে ৭৫৬৭১.০০ লক্ষ টাকা।
বার্ষিক রক্ষনাবেক্ষণ খরচ ৩০৮৯ লক্ষ টাকা এর বাস্তবায়নকাল হবে ৩ বছর। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মোট আয়তন ১,১২,৫৪২ বর্গমিটার (২৯.১৩ একর)। জেটির দৈর্ঘ্য ২১৫ মিটার, প্রস্থ ৩৫ মিটার। ১০০ মিটার পর্যন্ত ২টি কন্টেইনার জাহাজ একসাথে বার্থ করা যাবে। জেটি সংলগ্ন লোডিং আনলোডিং এরিয়া ৪৩০০ বর্গমিটার।
কন্টেইনার স্টোরেজ/স্ট্যাক ইয়ার্ডঃ ৩২২৬০ বর্গমিটার। একসাথে স্টোরেজ ক্ষমতা ৩০০০ টিইইউস। বার্ষিক কন্টেইনার পরিচালনার ক্ষমতাঃ ২,০৪,০০০ টিইইউস। সিএফএসঃ কন্টেইনার মালবাহী স্টেশন ৬০০ বর্গমিটার, রি-ফুয়েলিং স্টেশনঃ ১৫,০০০ লিটার স্টোরেজ ক্ষমতা কেপিআই। এর সাথে সীমানা প্রচীর, ট্রাক পার্কিং ইয়ার্ড, ফেরিঘাট নির্মাণ রয়েছে। এই পোট থেকে সম্ভাব্য বার্ষিক রাজস্ব আদায় ধরা হয়েছে ১৪৫২৫ লক্ষ টাকা।
গতকালকের সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, ঢাকা রেন্জ ডিআইজি মো. রেজাউল করিম মল্লিক, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, জেলা পুলিশ সুপার সামসুল আলম সরকার, লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নেছার উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) মো. আনিসুর রহমান প্রমূখ।