সিঙ্গাপুর থেকে ৫৬৯ কোটিতে এক কার্গো এলএনজি কেনা হচ্ছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ জানতে চেয়েছিল।
নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময় প্রকাশ পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও ‘বাজেট সহায়তা’ আসতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অর্থ উপদেষ্টা। তার আগে সোমবার আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি মিলিয়ে ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার ছাড় করার অনুমোদন দেয়। ৪৭০ কোটি ডলারের এই ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির টাকা বেশ কিছু দিন ধরে আটকে ছিল শর্তপূরণ না হওয়ার কারণে।
সবশেষ ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে ১১৫ কোটি ডলার ছাড় করে আইএমএফ। ওই তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার বাংলাদেশের হাতে এসেছিল। পরবর্তী চতুর্থ কিস্তি আসার কথা ছিল ডিসেম্বর মাসে।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও রিজার্ভ কমে যাওয়ার সময় নানা শর্তের কারণে বাকি কিস্তি আটকে থাকে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের একটা সময় প্রকাশ পাওয়ায় আইএমএফসহ সবাই সন্তুষ্ট হয়েছে। আইএমএফ আমাকে প্রশ্ন করেছিল যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি হবে না। ওরা চিন্তা করছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না হবে। আমরা তো বলেছি হবে।’
তিনি বলেন, ‘রিসেন্টলি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, এএফডি, এআইআইবি লোন অ্যাপ্রুভ করেছে। মোটামুটি বাংলাদেশে সংস্কার কাজের প্রোগ্রেস দেখে সবাই সন্তুষ্ট।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্রয় কমিটির বৈঠকে গম কেনা হয়েছে। ফরচুনেটলি গমের দাম কমে গেছে। এই কেনাকাটায় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘ইরান-ইসরাইল সংঘাতের কারণে হরমুজ প্রণালী দিয়ে পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে এখনো কোনো প্রভাব পড়েনি।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যুদ্ধের ভেতরেও জ্বালানি কেনার ক্ষেত্রে সাশ্রয় হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে যে প্রাইস ছিল সেটা, যুদ্ধ বন্ধের পর প্রাইস কমেছে। ইমিডিয়েটলি আমরা রিটেন্ডার করে ৫ থেকে ১০ ডলার কম পেয়েছি। সেখানে প্রায় ৭০/৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এটা এনার্জি মিনিস্ট্রির একটা ক্রেডিট। মরক্কো, তিউনিশিয়া থেকে আসা সারের দামও কিছুটা বেড়েছে। এখানে কোনো উপায় ছিল না।’
দেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘চাল গমের যে রিজার্ভ আছে সেটা এখনও সন্তোষজনক। তবুও আমরা বলেছি ৫০ হাজার টন গম এনে রাখার জন্য। যাতে খাদ্যের কোনো শর্টেজ না হয়।’
‘বিদেশি বিনিয়োগটা একটু স্লো আছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে, বিশেষ করে বাজেট সাপোর্ট আসার কারণে ফারেন রিজার্ভটা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি রপ্তানিটা এখন মোটামুটি ভালো। রেমিটেন্স আসছে ভালো।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘সৌদি আরবে গিয়ে জানলাম, সাধারণ নাগরিকরা আমরা আসছি বলেই টাকা পাঠাচ্ছে। আগে তারা টাকা পাঠাতে স্বস্তি পেত না। টাকা পাঠালে কোথায় যায় কি হয় এগুলো নিয়ে তাদের অস্বস্তি ছিল।’
এদিন ক্রয় কমিটির বৈঠকে কানাডিয়ান করপোরেশনের কাছ থেকে ৪০ হাজার টন এমওপি সার, গ্রুপ কেমিক তিউনিশিয়ার কাছ থেকে ২৫ হাজার টন টিএসপি এবং ওসিপি নিউট্রিক্রোপস মরক্কোর কাছ থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এমওপি সার প্রতিটন ৩৪২ ডলারে, টিএসপি সার প্রতিটন ৫৫০ ডলারে এবং ডিএপি সার প্রতিটন ৭১০ ডলারে কেনা হয়েছে।
জুন মাসে ২৫ হাজার টন গ্যাসোলিন (অকটেন) কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি ব্যারেলের প্রিমিয়াম প্রাইস ৫ দশমিক ৯৩ ডলার এবং রেফারেন্স প্রাইস ৭৩ দশমিক ৬১ ডলার হিসাব করা হয়েছে।
এতে মোট ২০৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খরচ হবে। ইন্দোনেশিয়ার বুমি সিয়াক পুসাক জাপিন (বিএসপি) এই তেল সরবরাহ করবে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনা হচ্ছে এক কার্গো এলএনজি। ভিটল এশিয়া সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে ১৩ দশমিক ৫২ ডলারে এই এলএনজি আসবে আগামী ২৮ বা ২৯ জুলাই। মোট খরচ হবে ৫৬৯ কোটি ২৯ হাজার ৩৬৩ টাকা।
বৈঠকে আগামী জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রিমিয়াম ও রেফারেন্স প্রাইস অনুযায়ী জ্বালানি কিনতে বিভিন্ন দেশের সরবরাহকারীদের নাম অনুমোদন করা হয়েছে। এতে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
সরবরাহকারী হিসাবে থাকছে সাতটি কোম্পানি। সেগুলো হলো পিটিটিটি থাইল্যান্ড, এনোক আরব আমিরাত, পেট্রোচায়না, বিএসপি ইন্দোনেশিয়া, পিটিএলসিএল মালয়েশিয়া, ইউনিপে চীন ও আইওসিএল ভারত।
বৈঠকে দুবাইয়ের সিরিয়াল ক্রপ ট্রেডিং থেকে ৫০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটন ২৭৫ ডলার হিসাবে তাতে মোট খরচ হবে ১৬৮ কোটি ৮২ লাখ ২৫ হাজার টাকা।