শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শূন্য থেকে লাখপতি

বায়েজিদ হাসান, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
  ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১১:০১

মনিরা নুসরাত ফারহা। বর্তমানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ৪র্থ র্ষের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছিলেন ব্যবসা। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। শিক্ষকের দেওয়া দশ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন ব্যবসা আজ হয়েছেন লাখপতি।

তার লাখপতি হওয়ার গল্প পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো

সময়টা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর, করোনার প্রবল থাবায় পুরো পৃথিবী যখন থমকে গেছে,সেই সাথে থমকে গিয়েছিলো তার পরিবার। মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের। পরিবারে মোট সদস্য সংখ্যা ৭জন, কর্মক্ষম জন তার বাবা এবং বড়ভাই। বড়ভাইয়ের চাকরী চলে যায়। তখন শুধু তার বাবার উপর নির্ভর হয়ে পড়তে হয় পরিবারের বাকি সদস্যদের

ফারহা পরিবারের এই অবস্থা খুব কাছ থেকে দেখতে পেরেছিলেন লকডাউনের সুবাদে। কিন্তু কিছু করার ছিলোনা। কারণ তখনও সে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স তৃতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। পরিবারের এমন অবস্থা দেখে তার কান্না পেতো। নিজের ল্যাপটপ টা বিক্রি করে দিতে হয়েছিল সে সময় ,কিছুদিন পরই মোবাইলটাও নষ্ট হয়ে যায়। সবমিলিয়ে দিশেহারা অবস্থায় চলে যায়।

এসব বিষয় কার সাথে শেয়ার করবেন। কে একটু তাকে সাহায্য করবে। এসব চিন্তাতেই তার সময় কাটতো খুব খারাপ অবস্থাতে। ফারহা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করতো। সে সুবাদে স্থানীয় সরকার নগর উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষক সাদিক হাসান শুভ স্যারের সাথে তার পরিচয়। অনেক চিন্তা ভাবনা করে কল দিলেন স্যারকে। বিস্তারিত সবকিছু খুলে বলেছেন। সেই শিক্ষক তাকে একজন উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিলেন এবং সেইসাথে দিলেন দশ হাজার টাকাও।

শিক্ষকের দেওয়া দশ হাজার টাকায় শুরু করলেন ছোট্ট একটি ব্যবসা ফারহার গ্রামের বাড়ী টাঙ্গাইল হওয়ায় কাজ শুরু করলেন টাঙ্গাইলের শাড়ী নিয়ে। ধীরে ধীরে সে কুমিল্লার খাদী পাঞ্জাবিও বিক্রি করা শুরু করলো। তখনও তার হাতে কোনো মোবাইল ফোন ছিল না দশ হাজার ৫শটাকার শাড়ী কিনে অফলাইনে বিক্রি করা শুরু করলেন পরিচিত লোকদের কাছে।

গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চললো তার ব্যবসা ৪৪ দিন পর তার মোট বিক্রয়ের পরিমাণ দাড়ালো ২৮ হাজার ৫শটাকা। সেই থেকে চলতে শুরু করেছে এখনও চলছে তার ব্যবসা এসময় ফারহার কাছের একজন মানুষ তাকে একটি মোবাইল ফোন গিফট করলো। এতে কিছুটা সহজ হলো তার কাজ। শুরু হলো অনলাইনে কাজ করা। ব্যবসা শুরুর মূলধন এবং মোবাইল দুটোই ছিলো তার জীবন বদলানোর জন্য উপহার স্বরূপ তাই সে তার পেইজের নাম দিয়েছেন সৌজন্য বাজার।

এরপর শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। ব্যবসার লাভের টাকা যেন খরচ না হয়ে যায়। ওই লাভের টাকা দিয়ে যেন ব্যবসা আরো বড় করতে পারে সেই চিন্তাধারা থেকে যোগ দিলেন একটা চাকরিতে। কল সেন্টার রিপ্রেজেনটেটিভস হিসেবে জয়েন করলেন পিজ্জাহাটে। সে সময় লকডাউন থাকায় অনলাইন ক্লাস হতো,অফিসের সবাই অনেক সাপোর্ট দিতো পড়ালেখার জন্য,ক্লাস করার সুযোগও দিতো। ১বছর চাকরি করতে পেরেছিল সে সময় ,এরপর অফলাইনে ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ায় আর সম্ভব হয়নি চাকরি করা।

এরপর পুনরায় পুরোদমে আবার শুরু করেন ব্যবসার কাজ পণ্যের কোয়ালিটির দিকে নজর দিয়েছিলেন শুরু থেকেই তাই বেশির ভাগ সময় রিপিট কাস্টমার পেয়েছেন তার লাভের টাকাকে মূলধন বানিয়ে সেই টাকায় পণ্য নিয়ে বিক্রি করতে করতে আজ তার মোট বিক্রয়ের পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে দেড়লাখে।

ফারহা আরো জানান, তার এই অব্দি আসার পেছনে সাদিক স্যারের অবদান অনস্বীকার্য, তার কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়েই স্যার বেঁচে থাকবেন। আপনাদের সকলের কাছেও আমি দোয়া চাই,নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে চাই আমি। চাকরি করতে চাইনা, চাকরি দিতে চাই।

যাযাদি/ এমডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে