বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়া মানবাধিকার সংগঠনগুলোর 'দ্বিচারিতা'

রাবি প্রতিনিধি
  ২৪ মার্চ ২০২৩, ১৭:২৯

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সহ ৯ মাস জুড়ে চলা জাতিগত নিধন ও গণহত্যার প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় পরও আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর এটিতে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া তাদের মানবাধিকার নিয়ে দ্বিচারিতা বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। এ সময় বাংলাদেশে হয়ে যাওয়া গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে দায়মুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তারা।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবনে জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ওয়ান বাংলাদেশ আয়োজিত আলোচনা সভায় কথাগুলো বলেন বক্তারা।

শুধু ২৫ মার্চ নয়, ১৯৭১ সালে সারা দেশ জুড়ে পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার প্রতিবাদ করে এ ঘটনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লড়াইকে সাধুবাদ জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। তিনি বলেন, কাদের কারণে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিচ্ছে না আমরা তা জানি। এটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু বাংলা ভাষাভাষী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে আমরা সবচাইতে বড় গোষ্ঠীগুলোর একটি। সুতরাং আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে নিশ্চিতভাবে এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করতে পারবো।

সেমিনারে উপস্থিত আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসি বাহিনী যে নির্যাতন চালিয়েছিলো সংখ্যায় না হলেও নির্মমতায় তাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলো পাকিস্তান।

তিনি আরো বলেন, ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিল, ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছিল, ২ লাখের বেশি মা বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হয়েছিল। ৭ হাজারের বেশি যুদ্ধ শিশুর জন্ম হয়েছিল, ৩ হাজার ৪টির বেশি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। পুরুষবিহীন ললিতাপল্লীর কথা আমরা ভুলে যাইনি। যেখানে প্রত্যেক মা'কে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহকারীরা। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার ঘটনার কথা বিশ্ব গণমাধ্যমেও নানা ভাবে উঠে এসেছে।

ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং বলেছিলেন, নয় মাসে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ ৩০ লাখ মানুষের গণহত্যা সভ্যতার মানচিত্রে সবচেয়ে নৃশংস গণহত্যার স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রাখে। ২৫ শে মার্চকে জাতিসংঘ গণহত্যার স্বীকৃতি না দিয়ে প্রমাণ করেছে তারা কতটা অকার্যকর। জাতিসংঘ তার নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থান হারিয়ে। জাতিসংঘ যে গণহত্যার পক্ষপাত দুষ্ট সংজ্ঞায় বিশ্বাস করে সেটির প্রমাণ দিয়েছে। বাংলাদেশে আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দিতে পেরেছি। আমরা ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রম হারা মা-বোন কাউকে ভুলিনি।

পাকিস্তানের গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, আগামীকাল ২৫ মার্চ। ৭১ সালে যেদিন গণহত্যার শুরু। স্বাধীনতার ৫ দশক পরেও শহীদ সন্তানদের আজও যুক্তি তুলে ধরে বলতে হয় সেটি গণহত্যা ছিল কি না! নিহত শহীদদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। প্রশ্ন করে, আসলে কি ৩০ লাখ মানুষ হত্যা হয়েছিল? নাকি ৩ লাখ? আমি প্রশ্ন করতে চাই, ৩ লাখ হলে গণহত্যার অপরাধ কিছুটা কমে যাবে! এখনও গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। ৭৫ এর ঘটনার পর ৯৬ পর্যন্ত ক্ষমতার মসনদে ছিল সেই খুনিরা। একটি গণহত্যার স্বীকৃতি আগে নিজের দেশ থেকে সংসদ থেকে পেতে হয়। সেটি পেয়েছি ২০১৭ সালে। আমরা শুধু ২৫ মার্চ নয়, পুরো ৯ মাস ধরে যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সেটির স্বীকৃতি চাইছি।

ওয়ান বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মো. রশিদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও ওয়ান বাংলাদেশের হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারি নবনীতা চক্রবর্তীর সঞ্চলনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ওয়ান বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মো. শাহ্ আজম, রাবি উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম টিপু এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে