সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়: ঝুলে আছে নজরুল ভাষ্কর্যের ভাগ্য

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
  ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৫০
আপডেট  : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:১০

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুরু হয়েছিল দুইটি ভাষ্কর্য নির্মাণের কাজ। একটি বঙ্গবন্ধু ভাষ্কর্য আর অন্যটি নজরুল ভাষ্কর্য। ২০১৯ সালের জুন-জুলাই মাসে ভাষ্কর্য দুটির সমস্ত কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো শেষ হয়নি নজরুল ভাষ্কর্যের পুরো কাজ। তবে নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পর অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই ২০২১ সালের ২৫ মে কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকীতে উদ্বোধন করা হয়েছে নজরুল ভাষ্কর্যটি। অসম্পূর্ণ ভাস্কর্যের নিচের অংশ সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে এবং লাল গালিচা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়টির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান এটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের পেছনে অবস্থিত নজরুল ভাষ্কর্যটির বেদি নির্মাণকাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এই অবস্থাতেই কাজ গুটিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুতিয়া করপোরেশন। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে কাজ। অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বারবার দাবি করলেও বাজেটের দোহাই দিয়ে বারবার এড়িয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর আগে ওই প্রকল্প নির্মাণে বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন অজুহাতে সময়ে সময়ে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। দুটি ভাষ্কর্যের বেদী নির্মাণের জন্য প্রাথমিক ব্যয় ৪২ লাখ টাকা ধরা হলেও তা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা। তবে এত হম্বিতম্বির পরেও এখনো কেন কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে বা আদৌ কাজ শেষ হবে কী না- এ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক ধোঁয়াশা।

জানা যায়, একাধিকবার সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির পরেও কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি আরও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করতে চেয়েছিল। এর পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মকর্তা। তবে নির্মাণকাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০২১ সালের জুন মাসে প্রকল্পে ফের অর্থ খরচের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মূলত এরপর থেকেই থমকে আছে নির্মাণকাজ।

প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই কেন কাজ বন্ধ করা হলো? জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুতিয়া করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী জিএম নুরুল করিম স্বপন বলেন, ‘আমার কাজ শেষ। বিভিন্ন কাজ বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এখনো আমি দশ লাখ টাকা পাবো। তারা আমাকে টাকা পরিশোধ করছে না। আমি ওখানে ঢালাই করেছি, ইট লাগিয়ে দিয়েছি। বাকি কাজ বিশ্ববিদ্যালয় যাকে দিয়ে করাতে চায়, তাকে দিয়েই করাক। আমার টাকাটা দিয়ে দিলেই হয়।’ কাজ শেষ হয়নি- বললে তিনি বলেন, ‘আমার যতটুকু কাজ করার কথা ছিল, ততটুকু শেষ।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পয়সা পেলে করবো। এখন টাকা নাই, করা যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশের বিষয়ে কিছু জানি না। এখন বাধা হচ্ছে বাজেট। বাজেট পেলে কাকে দিয়ে করাবো সেটা দেখা যাবে। আমরা চেষ্টা করছি।’

বারবার বাজেট বৃদ্ধি করার পরেও বাজেট সংকটে আটকে আছে নজরুল ভাষ্কর্যের সম্পূর্ণতা। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহা বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোনো কারণে যদি কোনো ধরণের বাজেট সংকটও থেকে থাকে, তাহলে সেটাকে ম্যানেজ করা উচিত। একটা কাজে বাজেট বর্ধিত করার সুযোগ থাকে, তবে সেটা যখন দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায়- তাহলে সমসা। এখানে ঠিকাদারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। যেকোনো কাজ নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করতে না পারা যেমন ঠিকাদারের দোষ, তেমনি কাজটি ঠিকভাবে আদায় করে নিতে না পারা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের দোষ।’

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘এই কাজটি শুরু হয়েছে আমি আসার আগেই। কাজটি কেন সম্পন্ন করতে পারে নি সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। যে কাজ শেষ করতে পারবে না সেটি শুরু করবে কেন? আমি এই কাজের স্থবিরতা সম্পর্কে অবগত আছি। সামনের বছরই এটির কাজ শেষ করতে চাই।’

যাযাদি/এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে