বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের উপস্থিতি পত্রে মুজিব শতবর্ষের ছবি, তোলপাড়

বেরোবি প্রতিনিধি
  ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪৮
আপডেট  : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৪১
ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের উপস্থিতি পত্রে মুজিব শতবর্ষের ছবি, তোলপাড়
ছবি: যায়যায়দিন

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের উপস্থিতি পত্রে এখনও মুজিব বর্ষের লোগো ও বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকায় বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন কবি হেয়াত মাহমুদ ভবনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরীক্ষার রিজার্ভ ডিউটির তালিকায় দেখা যায় আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মন ও নীল দলের প্রতিষ্ঠাতা ড. আপেল মাহমুদ সহ পাচঁজন শিক্ষকের তালিকায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর লোগো রয়েছে।

বিষয়টি শিক্ষকদের নজরে আসলে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে সাথে সাথেই ওই তালিকাটি সরিয়ে নেয়া হয় এবং বাকি তিনটি ভবনের শিক্ষকদের ডিউটির তালিকায়ও বঙ্গবন্ধুর লোগো থাকায় সে তালিকা গুলোও সরিয়ে ফেলা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক এবং ভর্তি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্রে এখনও বঙ্গবন্ধুর লোগো থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন জুলাই আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।

এছাড়া ওই একই দিন সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও বঙ্গবন্ধুর লোগো সম্বলিত শিক্ষকদের রিজার্ভ ডিউটির তালিকা ও সকল ভবনে সরবরাহ করা হয় বলে জানা গেছে। বঙ্গবন্ধুর লোগো সম্মিলিত সব গুলো উপস্থিত পত্রে শিক্ষকরা স্বাক্ষরও করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগজে এখনও এ লোগো দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বি এন পি পন্থি কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা । অনতি বিলম্বে ওই সকল উপস্থিতি পত্র বাতিল করারও দাবি জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকালের পরীক্ষাটির সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশনস্ সিষ্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ও আওয়ামীপন্থি নীল দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. আপেল মাহমুদ। এর আগে তিনি আবু সাঈদ বই মেলা কমিটিতে থেকেও বিতর্কের মুখে পদত্যাগ করেন। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কট্টর আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ড. আপেল মাহমুদ ছাত্র জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ক্যাম্পাসে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েই ২০১৪ সালে নীলদল প্রতিষ্ঠা করে নিজেই সভাপতি হন। এরপর হয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে রয়েছেন কার্যকরী সদস্য পদে। এছাড়াও নীল দলের প্যানেলে থেকে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ২০২৩ সালে জয়লাভও করেন তিনি।

তবে এই তালিকাটি প্রস্তুত করেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন। এ শিক্ষক গত ভিসির আমলে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্বেও ছিলেন।

ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, অনুষদে সিনিয়র শিক্ষক থাকা স্বত্বেও বারাবার উপাচার্য বিতর্কিত আওয়ামীপন্থি শিক্ষক আপেলকেই দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। এছাড়া সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পরীক্ষায়ও এ শিক্ষককে দায়িত্বে রাখা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে ড. আপেল মাহমুদ বলেন, আমার দায়িত্ব ছিল শুধু যোগাযোগ করা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে টিম আসছে তাদের সাথে থাকা। রাজশাহী টিমের যাবতীয় সকল কিছু আমি দেখা শোনা করছি। তাদের নিরাপত্তা, কেন্দ্র ভিজিট, খাওয়া ইত্যাদি আমার দায়িত্ব ছিল। এখানে ভোকাল দায়িত্বে ছিলেন ফেরদৌস স্যার। এখানে কাজের সুবিধার জন্য কয়েকটি উপ-কমিটি করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক শরীফ উদ্দিন বলেন, মুজিব শতবর্ষ লোগো ব্যবহার হওয়ার তো কথা না। এইটা হয়ত আগের। আমার কাছে তো মূল কপি গুলো আছে সেখানে তো এই লোগো নেই।

জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় ভূমিকা রাখা শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সাধনের জন্য যখন দল মত নির্বিশেষে কাজ করছে তখনও পরাজিত শক্তি বিভিন্ন ভাবে সেটিকে প্রতীয়মান করে যাচ্ছে এটি তারই বহিঃপ্রকাশ ।এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।

বেরোবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করেছি কিন্তু তারপরও বেরোবি থেকে ফ্যাসিবাদ এবং তার দোসরদের দূর করতে পারিনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা প্রমোশন পাচ্ছে। প্রশাসন বারবার আওয়ামী পন্থিদের সুবিধা দেওয়ায় আমাদের মধ্যেও সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। আমরা দলীয়ভাবে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিব।

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, এমন একটা ঘটনা আমি শুনেছি। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে