রংপুরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির মৃত্যুর ১০ মাস পর দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহা. মাহামুদুল হকের জামিন আবেদন করেছেন তার আইনজীবীরা। জামিন শুনানির পিছিয়ে আগামী মঙ্গলবার (২৪ জুন) দিন ধার্য করেছেন বিচারক।
মাহমুদুল হকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম আল মামুন বলেন, যে মামলায় মাহমুদুল হককে আসামি করা হয়েছে মামলার বাদী এ বিষয়ে জানেন না। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর যে শিক্ষক প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেপ্তার করা জুলাই চেতনার পরিপন্থি।
আদালত চত্বরে মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান মুন বলেন, আমি আশা করেছিলাম, আজ তাকে সম্মানের সঙ্গে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে পারব; কিন্তু আদালতের এই সিদ্ধান্ত আমাদের ভীষণ হতাশ করেছে। কোনো যুক্তি বা কথা শোনার আগেই জামিন শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বিচার না পেলে আমরা কোথায় যাব, কার কাছে ন্যায় চাইব?
এইদিকে জামিন আবেদনের আগে ও পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।
এসময় জেলের তালা ভাঙবো মাহমুদুল স্যারকে আনব, মাহমুদুল স্যারের মুক্তি চাই দিতে হবে', 'জুলাই নিয়ে বাণিজ্য চলবে না চলে না, আমার স্যার জেলে কেনো জবাব চাই জবাব চাই ' ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মাহমুদুল স্যার নির্দোষ। তিনি জুলাই বিপ্লব আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে তাকে মিথ্যা হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, মাহমুদুল স্যারকে যে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে, সেটা ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা। কোনো তদন্ত ছাড়াই স্যারের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিক্ষোভ শেষে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ আগামীকাল পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, হাজিরহাট থানা ও ঢাকা রংপুর মহাসড়ক অবরোধের হুশিয়ারি দেন।
বিতর্কের মুখে বদলি করা হয়েছে হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহকে। বদলির বিষয়টি তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (২২ জুন) মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বদলি আদেশ থেকে জানা গেছে, হাজিরহাট থানার ওসিকে মহানগর ডিবির পরিদর্শক ও মহানগর ডিবির পরিদর্শক রাজিবুল ইসলামকে হাজিরহাটের ওসি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে ছমেস উদ্দিন হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার গ্রেপ্তারের পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানান। তারা অবিলম্বে মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা এই গ্রেপ্তারকে গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেন এবং দ্রুত তাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান।