শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেলুন বিস্ফোরণ: পুলিশের অনুষ্ঠানে গান গাওয়া হয়নি রনি’র, বলা হয়নি কৌতুকও  

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:৪০
আপডেট  : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৩৫

গান গাইতে ও কৌতুক বলার জন্য গত শুক্রবার গাজীপুর মহানগর পুলিশের ৪র্থ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলেও তিনি তার পারফরমেন্স দেখাতে পারেননি। অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পরপরই বেলুন বিস্ফোরণে তিনিসহ আরো চার পুলিশ সদস্য দ্বগ্ধ হন। তাদের মধ্যে রনি ও পুলিশ সদস্য জিল্লুর রহমান বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীণ রয়েছেন। সেখানে তারা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের ডিসি (উত্তর) মো. হুমায়ুন কবির জানান, গাজীপুর মহানগর পুলিশের ৪র্থ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রনি শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠানস্থল গাজীপুর জেলা পুলিশ লাইন মাঠে পৌঁছেন। সেখানে মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে তিনি পুলিশ লাইনে পুনাক’র জেলা কার্যালয়ে বসে পুনাক সদস্যদের কৌতুক পরিবেশন করেন। সন্ধ্যার দিকে তিনি পুনাক সদস্যদের গান শুনানোর জন্য অপর কক্ষে রাখা তার গিটার আনতে পুনাক অফিস থেকে বের হন। পরে তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিলবোর্ড, ব্যানার-ফ্যাস্টুনসহ অনুষ্ঠান স্থলের বিভিন্ন আয়োজনের দৃশ্য দেখছিলেন। এক পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পূর্ব পাশে আকাশে ’না ওড়া’ বেলুন গুচ্ছের নিচে লাগানো ফেস্টুনের লেখা পড়ছিলেন। এসময় আকস্মিকভাবে বেলুনের বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় রনি ছাড়াও সেখানে থাকা গাজীপুর পুলিশের কন্সটেবল মোশারফ হোসেন, গাছা থানার কনস্টেবল রুবেল মিয়া ও ইমরান হোসেন, টঙ্গী পূর্ব থানার কনস্টেবল জিলুর রহমান দ্বগ্ধ হন। পরে তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে গুরুতর অবস্থায় রনি ও জিল্লুর রহমানকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। তাদের চিকিৎসার জন্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠণ করা হয়েছে। বোর্ড বলেছেন তাদের চিকিৎসা চলছে। তবে ৭২ ঘন্টার আগে তাদের বিষয়ে অন্য কোন সিদ্ধান্তের কথা বলা যাচ্ছে না। সোমবার সকাল ১১টায় ওই বোর্ডের সদস্যরা আবারো মিটিংয়ে বসবেন।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় জিএমপি’র ৪র্থ বর্ষপূর্তীর অনুষ্ঠানের মঞ্চের পূর্ব পাশে ছোট উদ্বোধন মঞ্চে ওড়ানোর জন্য কিছু গ্যাস বেলুন নেয়া হয়। কিন্তু বার বার চেষ্টা করলেও বেলুনগুলো উড়ছিলনা। পরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এতে সেই বেলুনগুলি মঞ্চের পিছনে নিয়ে যায়। পরে পায়রা উড়িয়ে স্বরাষ্ট্রামন্ত্রীসহ অন্য অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানের মুল মঞ্চে চলে যান। তারা মূল মঞ্চে চলে যাওয়ার কিছু সময় পর কয়েকজন পুলিশ সদস্য বেলুন বিক্রেতাকে বকাঝকা করলে বেলুন বিক্রেতা নিজেই বেলুন গুলো উড়ানোর চেষ্টা করার সময় বিস্ফোরন ঘটে। এসময় বিস্ফোরণে কমেডিয়ান আবু হেনা রনি, গাজীপুর পুলিশের কন্সটেবল মোশারফ হোসেন, গাছা থানার কনস্টেবল রুবেল মিয়া ও ইমরান হোসেন, টঙ্গী পূর্ব থানার কনস্টেবল জিলুর রহমান আহত হয়ে নিচে লুটিয়ে পড়েন। পরে আশপাশের পুলিশ সদস্যরা তার গায়ে পানি ঢেলে আগুন নেভায় এবং গাড়িতে করে দ্রæত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আবু হেনা রনি ও কনস্টেবল জিল্লুর রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, রনির ২৫ শতাংশ এবং জিল্লুর ১৫ শতাংশ বার্ন হয়েছে। আগুনে তাদের শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে মোশারফ হোসেনসহ দুই পুলিশ সদস্য আশঙ্কা মুক্ত রয়েছেন।

রনি ও জিল্লুরের উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠণ ছাড়াও উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানো হবে। তাদের চিকিৎসার সকল ব্যয় ভারও বহন করা হবে।

প্রাথমিক জীবন

আবু হেনা রনি একজন বাংলাদেশী স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান, অভিনেতা, উপস্থাপক ও মডেল। রনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিলের বিলদহর গ্রামে ১৯৮৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর জন্ম নেন। তার বাবা আব্দুল লতিফ একজন অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যালয় শিক্ষক এবং মা বিনা বেগম একজন গৃহিণী। চার ভাইয়ের মধ্যে রনি দ্বিতীয়।

একান্নবিঘা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু। এরপর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হিসেবে, বিলদহর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক (এসএসসি) এবং বরেন্দ্র সরকারি কলেজ হতে উচ্চ-মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাশ করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগ থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন-কৌতুক অভিনয়

ছেলেবেলা থেকেই কৌতুক উপস্থাপনার মাধ্যমে বন্ধুদের আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করতেন রনি। ২০১০ সালে এনটিভিতে একটি অনুষ্ঠানে তিনি প্রথম কৌতুক উপস্থাপনে অংশ নেন। পরবর্তীতে জুলাই ২০১১ সালে, ভারতের জি বাংলায় প্রচারিত কমেডি শো মীরাক্কেলে অংশগ্রহণ করেন। এই অনুষ্ঠানের প্রথম ৪০টি পর্বে অংশ নিয়ে তার ২৫টিতে তিনি একক ও যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২০১১ সালের শেষে মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার ৬-এর চ্যাম্পিয়ন হন তিনি।

বর্তমানে তিনি নতুন কৌতুক অভিনেতা তৈরির পাশাপাশি বাংলাদেশে কৌতুকে আরও জনপ্রিয় করার লক্ষে ‘বুনো পায়রা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি বাংলাদেশ কমেডি ক্লাবের উদ্যোগে দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি কমেডি ক্লাব তৈরি করেছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা থানা পর্যায়েও পৌছে গেছে। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও একটি কমেডি ক্লাব রয়েছে । এ সকল কমেডি ক্লাবের রক্ষনাবেক্ষন এর দায়িত্ব ক্লাবের সদস্যরাই পালন করে থাকে । তবে কেন্দ্রীয় ভাবে সকল ক্লাবই বুনোপায়রা ও বাংলাদেশ কমেডি ক্লাবের নিকট দায়বদ্ধ ।

উপস্থাপনা

কৌতুক অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নিয়মিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে উপস্থাপনা করছেন। এর মধ্যে গাজী টিভিতে আজকের অনন্যা, এটিএন বাংলায় কমেডি আওয়ার ও সিনে মিউজিক, বাংলাভিশনে ক্ষুদে রসিকরাজ এবং বৈশাখী টিভিতে যাদুর শহর[৭] উল্লেখযোগ্য।

অভিনয়

রনি কাকতাড়ুয়ার দেশে, চতুষ্কোণ ইত্যাদি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন।

স্বপ্ন যে তুই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটান। এরপর অভিনয় করেন তন্ময় তানসেনের পরিচালনায় পদ্ম পাতার জল (২০১৫) চলচ্চিত্রে বিষু চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

প্রকাশনা

মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার্সে বিজয়ের পর ২০১৪ সালে একুশে গ্রন্থমেলায় মীরাক্কেল জোকস্ ল্যাও ঠ্যালা শিরোনামে কৌতুক বিষয়ক তার প্রথম বই প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালে আনন্দ টাই মাটি শিরোনমে তার আরেকটি বই প্রকাশিত হয়।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জারস ৬ চ্যাম্পিয়ন (২০১১)

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে