সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

ভেঙেই গেল রাজ-পরীর সোনার সংসার

মাতিয়ার রাফায়েল
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৪
ভেঙেই গেল রাজ-পরীর সোনার সংসার
ভেঙেই গেল রাজ-পরীর সোনার সংসার

এই ভাঙে, এই গড়ে, এ রকম দোলাচলেই চলছিল চিত্রতারকা দম্পতি শরিফুল ইসলাম রাজ-পরীমনির সংসার। মিডিয়াগুলোও দফায় দফায় শিরোনাম করে, ‘অবশেষে ভেঙেই গেল রাজ-পরীর সংসার’। কিন্তু বারবারই নতুন করে সেই খবর বদলে অন্য খবর দিতে হয়েছে। সর্বশেষ রাজ-পরী একই ছাদের নিচে এসেছিলেন গত মাস, আগস্টের মাঝামাঝিতে। এবার বোধ হয় লিখতেই হচ্ছে- ভেঙেই গেল রাজ-পরীর সোনার সংসার! কারণ, এবারে শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনি নিজেই আনুষ্ঠানিকভাবেই তাদের এই বিচ্ছেদ টেনে দিয়েছেন। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী পরীমনি সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন শরিফুল রাজকে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

আসলে আলাদা তারা আগে থেকেই হয়ে আছেন। বাকি ছিল কেবল কাগজ-কলমে আনুষ্ঠানিকতা। এবার সেটাও সেরে নিচ্ছেন। জানা গেছে, রাজের সঙ্গে ডিভোর্সের কারণ হিসেবে মনের অমিল হওয়া, বনিবনা না হওয়া, খোঁজখবর না নেওয়া, মানসিক অশান্তির কথা উল্লেখ করেছেন পরীমনি। তবে এ প্রসঙ্গে জানতে পরীমনি এবং শরিফুল রাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে মঙ্গলবার মধ্যরাতে পরীমনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে রাজের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ আনেন। জানান, এক পাতানো বোনকে সঙ্গে নিয়ে রাজ তার গায়ে হাত তুলেছেন।

অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘ধরেন, এই কাজটা আমি যদি করতাম। একজনকে ভাই পরিচয় দিয়ে তার বাসায় যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে গিয়ে তার সাথে মাসের পর মাস পার করে দিতাম- কী বলতেন আমাকে তখন? আজ আমাকে রাজ এবং তার পাতানো বোন মিলে গায়ে হাত তুলেছে। তার জবাব মিডিয়া দিতে পারবেন তো?’

পরীমনি প্রশ্ন রেখে আরও লিখেছেন, ‘রাজ কার সাথে থাকে? সুগার মমি নাকি কোনো অনৈতিক ব্যবসায়িক চক্র? কী চলে মহানগর প্রজেক্টে তাদের ওই বাসা নামক অপকর্মের আস্তানায়? প্রশাসন, মিডিয়ায় যারা আছেন বের করেন এবার! অনেক কথা বলার বাকি! এত চুপ থাকা যায় না।’

যদিও এই পোস্টটি অল্প কিছুক্ষণ পরই মুছে ফেলেন পরীমনি। এরপর নায়িকার ব্যবহৃত নম্বরটি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। তবে সেই নম্বরে ফোন করে দেখা গেছে তাতে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। মুছে ফেলা হয় পরের পোস্টটিও। পরীমনির ফেসবুক হ্যাক হয়নি তো? বিষয়টি জানতে তাকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ না করে তা কেটে দেন। বার্তা পাঠালেও উত্তর মেলেনি।

পরী এবং রাজের সংসারে এরকম অনুযোগ-অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও একাধিকবার রাজ-পরীমনির সংসারে ভাঙনের সুর বেজেছে। তবে বারবারই সেই খাদের কিনার থেকেও এক হয়েছেন তারা। একমাত্র সন্তানের কথা ভেবেই হননি আলাদা। এর আগেও রাজের নানা বিষয় নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন পরী। বিদ্যা সিনহা মিম থেকে শুরু করে সুনেরাহ বিনতে কামাল, তানজিন তিশা, নজিফা তুষি পর্যন্ত অনেক কিছুরই অভিযোগ এনেছিলেন পরী। রাজের সঙ্গে আর কখনোই সংসার করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিলেন পরী। তবে বিচ্ছেদের বিষয়ে আগে যেখানে পরী বলতেন ডিভোর্স দিতে হলে আগে এটা রাজের পক্ষ থেকেই আসতে হবে। তিনি নিজে থেকে কখনো রাজকে ডিভোর্স দিতে চান না। বলেছিলেন, ‘আমি চাই রাজই আমাকে তালাক দিক’।

তবে এর আগে বিভিন্ন সূত্রে খবর মিলেছে, পরীর মতো রাজও বরাবরই অটল ছিলেন তার পক্ষ থেকে ডিভোর্স লেটার না পাঠানোর। চেয়েছেন চিঠিটি পরীর পক্ষ থেকেই আসুক। সেটাই যেন এবার হলো! কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল এখানেই রাজের কাছে হেরে গেলেন পরী। রাজের পক্ষ থেকে কোনো ডিভোর্স লেটার তো এলোই না বরং শেষপর্যন্ত পরীমনির পক্ষ থেকেই ডিভোর্স লেটারটি এলো!

ইঙ্গিতটা অবশ্য পরীমনি ক’দিন আগেই দিয়েছিলেন। কেউ আঁচ করতে পেরেছিল, কেউ পারেনি। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লিখেছিলেন, ‘কালকের (১৭ সেপ্টেম্বর) দিনটা আমার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন! একটি (স্বাক্ষরের ইমোজি)। আল্লাহ ভরসা।’ তবে পরীর জীবনে বিয়ে ভাঙনের এই খেলাও অবশ্য নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে এখানে হয়তো একটা হিসাব অমীমাংসিতই থেকে যাবে যে, শরীফুল রাজ পরীমনির কয় নম্বর স্বামী? চার, পাঁচ, নাকি ছয়? এ নিয়েও বিতর্ক আছে। পরীমনি শোবিজে আসার আগেই দূর সম্পর্কের দাদা ইসমাইল হোসেনকে বিয়ে করেছিলেন। সালটা ২০১০, দু বছর পর ফেরদৌস কবীর সৌরভ নামে এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় পরীর। সেই সৌরভের ইচ্ছেতেই নাকি পরীর অভিনয়ে আসা। অনেকে দাবি করেন, সৌরভের সঙ্গে ডিভোর্সই হয়নি পরীর। তবে তাদের পথ আলাদা হয়েছে বহু আগেই।

ক্যারিয়ারের একেবারে গোড়ার দিকে প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল পরীমনির, কিন্তু তারা বিয়ে করেননি। এরপর ২০২০ সালের ১৪ই এপ্রিল সাংবাদিক তামিম হাসানের সঙ্গে বাগদান সারেন অভিনেত্রী। গত বছর এপ্রিলে তাদের বিয়ের তারিখ পাকাও ছিল, তবে সম্পর্ক টেকেনি। অনেকেই বলেন তামিম-পরীমনির বিয়েটা হয়ে গিয়েছিল। এখানেই শেষ নয়, ২০২১ সালের মার্চে সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে খুবই অল্প দিনের পরিচয়ে বিয়ে করেন পরী। তবে তিন মাসও টেকেনি সেই বিয়ে।

তামিম হাসানের সঙ্গে পরীমনির বিয়ে হয়েছিল কিনা তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে, তাই শরীফুল রাজ পরীমনির কত নম্বর স্বামী এই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র পরীরই জানা। তবে সবারই কায়মনে প্রার্থনা ছিল রাজের সঙ্গে অন্তত মন টিকিয়ে সংসার করুক পরী। কেউ কেউ তো এও বলছেন, এবার যখন মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন রাজের সঙ্গে বিয়েটা টিকেই যাবে বোধহয়!

তার মানে পরীমনি রাজের সঙ্গে সংসার টেকাতে মনে-মনে হলেও অনেক আকাক্সিক্ষত ছিলেন। নয়তো তার গর্ভে রাজের সন্তান নেবেন কেন? কিন্তু শেষপর্যন্ত আর পারলেন না। একজন ‘পাতানো বোন’কে দিয়ে তার গায়ের ওপর হাত তোলার বিষয়টিই রাজের প্রতি তার যতটুকু মন অটুট ছিল সেটাও ভেঙে গেল অবশেষে! তার মানে এবার আর শেষরক্ষা হলো না। নিয়তির কী পরিহাস, পরী-রাজ দু’জনার দুটি পথ বেঁকে গেল দু’দিকেই!

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে