শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

অনবদ্য শিল্পী রুনা খান

মাতিয়ার রাফায়েল
  ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২২
অনবদ্য শিল্পী রুনা খান

শোবিজের প্রায় সর্বত্রই বিচরণকারী এক পারফর্মারের নাম রুনা খান। মডেল, মিউজিক ভিডিও’র মডেল থেকে শুরু করে থিয়েটার, ছোটপর্দা, ওয়েব সিরিজ, গান, সিনেমা সব জায়গাতেই তার উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মতো। যাকে বলে ভার্সেটাইল অভিনেত্রী রুনা খান একদম তাই।

তবে এমনও নয়, অভিনয়ে তার খুব ঘন ঘন উপস্থিতি রয়েছে। যেমন খুশি তেমন চরিত্রে অভিনয় করেন। এ ক্ষেত্রেও তিনি খুব সিলেক্টিভ।

বেছে বেছে কাজ করেন। সেটা তার প্রোফাইলে প্রবেশ করলেও বোঝা যাবে। তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘হালদা’, বদরুল আনাম সৌদ পরিচালিত ‘গহীন বালুচর’, সাজেদুল আউয়াল পরিচালিত ‘ছিটকিনি’ নামের সিনেমাগুলোও এমন নয় দর্শকের মাঝে খুব বেশি আলোচিত ছিল। পরিচালকদের নাম দেখলেও বোঝা যাবে তারা প্রত্যেকেই গুণী পরিচালক। যাদের পরিচালনার গুণে ছবিগুলোতে তার অভিনয়ও সমালোচকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নতুন কাজ শেষ করেছেন রুনা খান। এর মধ্যে আছে একটি ওয়েবফিল্ম। মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন লোকেশনে দৃশ্যায়িত ‘শোধ’ নামের এই কন্টেন্টটির পরিচালনায় আছেন শাহরিয়ার নাজিম জয়। অভিনয় করেছেন বক নামের একটি সিনেমায়। দুটোই চ্যালেঞ্জিং চরিত্র বলে জানিয়েছেন রুনা খান। এ ছাড়া আরও কয়টি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন এই নায়িকা। কাজগুলো কৌশিক শংকর দাস পরিচালিত ‘দাফন’, রুবেল আনুশের ‘উধাও’, পঙ্কজ পালিতের ‘একটি না বলা গল্প’ এবং তৌফিক এলাহি পরিচালিত একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নীলাম্বরী’। আগের ছবিগুলোর বেশির ভাগই কো-আর্টিস্ট বা পার্শ্বচরিত্রেই অভিনয় করলেও নতুন সিনেমায় প্রধান চরিত্রেই অভিনয় করছেন বলে জানালেন রুনা খান।

রুনা খান পার্শ্বচরিত্রেই হোক কিংবা প্রধান চরিত্রে চরিত্রটি যদি গুরুত্বপূর্ণ না হয় তেমন চরিত্রে অভিনয় করেন না। কেননা, সচরাচর পার্শ্বচরিত্রে যারা অভিনয় করেন বেশির ভাগই চরিত্র নিয়ে খুব একটা বাছবিচার করেন না। রুনা খানই যেন ব্যতিক্রম। পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেও চরিত্রটি যেন সম্মানজনক হয় এ ব্যাপারে তিনি খুবই স্পর্শকাতর। তখন চরিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ না হলে পারফর্ম করেন না। পার্শ্বচরিত্রকেও কী করে শিল্পমানসম্পন্ন করা যায় তার একাধিক পুরস্কার প্রাপ্তিতেই সে পরিচয় পাওয়া যায়। যদিও বাংলাদেশে প্রধান চরিত্ররাই বেঁচে থাকেন, পার্শ্বচরিত্র শিল্পীকে এক সময় হারিয়েই যেতে হয়। কেউ মনে রাখে না তাদের। তবে রুনা খান তারপরেও নিজের কাজের প্রতি খুব যত্নশীল। আর তার এই কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। অভিনয়ের জন্য এ পর্যন্ত নানান পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণিত করেছেন। পেয়েছেন হালদা সিনেমায় ‘জুঁই’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এ ছাড়া মেরিল প্রথম আলো, বাচসাসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা অর্জন করেছেন। দেখা যায়, কাজের অনুপাতে পুরস্কারের ঝুলিই যেন তার ভারী বেশি।

আর এখন তো চরিত্রের ব্যাপারে আরও বেশি খুঁৎখুঁতে হবেন সেটাই স্বাভাবিক। কেননা, এদিকে বয়সও তার চল্লিশে পা দিয়েছে। তারপরেও বয়স যেন একটি সংখ্যা মাত্র তার কাছে। তার প্রমাণেই আরও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পারফর্ম করতেই যেন নিজেকে এখনও তন্বী তরুণীতেই উপস্থাপিত করতে ভালোবাসেন রুনা খান। মাঝখানে ওজন বেড়ে ১০৫ কেজিতে গিয়ে ওঠে। ঘাবড়েই গিয়েছিলেন। পরে সেই ওজন ৩৯ কেজিতে নামিয়ে সবাইকে চমকে দেন দু’বছর হলো। সেই থেকে কী করে ওজন কমালেন এ নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় একের পর এক প্রশ্ন প্লাবনে হিমশিম খাওয়ার অবস্থা তার।

অবস্থা এমন হয়েছে, এ নিয়ে এখন কোনো কথাই বলতে চান না আর! কথা বলতে চান শুধু নতুন অভিনয় নিয়েই। নিজের নতুন কাজ সম্পর্কে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী রুনা খান বলেন, ‘আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অভিনয় করে যেতে চাই। বেছে বেছে ভালো ভালো কাজ করতে চাই। একটা চরিত্র থেকে আরেকটা চরিত্র ভিন্ন হবে এমন চরিত্রে কাজ করতে চাই সব সময়। নতুন যে সিনেমাগুলোতে কাজ করেছি সেগুলোর প্রত্যেকটিই তাই। তারপরেও বলে রাখি, কোনো কাজই আমাকে পূর্ণ তৃপ্তি দেয় না। একটা না একটা অতৃপ্তি থেকেই যায়। কাজ কখনো সন্তুষ্ট করে না।’ যদিও সবাই তার কাজের প্রশংসা করেন। শুটিং সেটেও নিজের অভিনয়ের প্রশংসা শুনেছেন। এই প্রশংসা তাকে অনুপ্রেরণা জোগায়।

যে সময়টায় ছোটপর্দার ধারাবাহিক নাটকের মান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সে সময়েও রুনা খানের অভিনয় প্রশংসিত হচ্ছে। এটাই রুনা খানকে আরও বেশি প্রেরণা জোগায়। কখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, কখনো শুটিং সেট থেকে পাওয়া এসব প্রশংসা তাকে আপ্লুত করে।

এর মধ্যে আছে গৌতম কৌরি পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘আন্তঃনগর’। যাতে রুনা খানের অভিনয় দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। অন্যদিকে, ঋত্বিক ঘটকের একটি কালজয়ী সিনেমা ‘মেঘে ঢাকা তারা’ অবলম্বনে করা শাহজাদা ইসলাম শায়খের ‘বড় মেয়ে’ নামের নাটকের প্রধান চরিত্র ‘নীতা’র ভূমিকায় অভিনয় করে দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন রুনা। এর আগে প্রশংসিত হয়েছে অসম্ভব জনপ্রিয় হওয়া মারুফ রেহমানের চিত্রনাট্যে এবং মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের পরিচালনায় টানা ২১ মাস ধরে চলা ১৮২ পর্বের ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নামের ধারাবাহিকে ‘ভাবি’ চরিত্রটি। হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে শেষ হওয়া সেই ধারাবাহিকটিতে ‘সালমা ভাবি’ চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসিত হয়েছিলেন রুনা।

সেই ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে রুনা জানান, ‘এখন দেশে ৩০টির মতো চ্যানেল, নেটফ্লিক্স, আমাজনের মতো সাইটসহ অনেক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আছে। তারপরও ওই ধারাবাহিক নাটকের একটি চরিত্র থেকে বিপুল সাড়া পাওয়া আমার জন্য একটা অবিশ্বাস্য ভালো লাগার ব্যাপার।’

রুনা খানের আরও প্রশংসিত কাজের মধ্যে এস এ হক অলীক পরিচালিত টেলিফিল্ম ‘স্বর্ণমানব-৫’, ওয়েব সিরিজ অমিতাভ রেজা নির্মিত ‘বোধ’ অন্যতম। মুক্তির পরেই বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে সিরিজটি। এতে একজন শিক্ষিকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রুনা। পর্দায় তার অভিনয় দর্শকের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়। সিরিজটিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য ‘ময়ূরপঙ্খী স্টার অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ এ সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে