সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৮ আশ্বিন ১৪৩০
walton

১৪ জুনের পর কমতে পারে তাপমাত্রা

যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ জুন ২০২৩, ১৩:০৭
আপডেট  : ০৬ জুন ২০২৩, ১৪:৪০

বেড়েই চলেছে তাপপ্রবাহের পরিধি। সোমবারও অস্বস্তিকর ভ্যাপসা গরমে ভুগতে হয়েছে দেশবাসীকে। এদিকে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে সেখানে সৃষ্ট উষ্ণস্রোত পৃথিবীর এই অংশের তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে। বিশ্বের আবহাওয়া এখন এল নিনো ফেজে ঢুকেছে। জুন-জুলাই মাসে পুরোপুরি ঢুকে যাবে। এতে বর্ষা না আসা পর্যন্ত গরমের তীব্রতা পুরোপুরি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এতে ভ্যাপসা গরম আরও বাড়তে পারে। তবে ১২ জুনের পরে মৌসুমি বৃষ্টিপাত শুরু হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসতে পারে।

তবে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইডি গবেষক জলবায়ু বিজ্ঞানী গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ তার ফেসবুকে বলেছেন, ১৪ জুন পর্যন্ত তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়ার সব মডেল বিশ্লেষণ করে তিনি একথা জানান।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই দেশের কোথাও তেমন বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে মৌসুমি বায়ু আসার অপেক্ষায় দেশ। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও বেশি থাকে। ফলে তাপমাত্রার পরিমাণ যতটা, তারচেয়েও অনেক বেশি তাপ অনুভূত হচ্ছে মানুষের কাছে। গরমে ঘেমে আরও অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে পরিবেশ। সবচেয়ে বেশি ভুগছেন শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে রিকশাওয়ালা, বাসের ড্রাইভার-হেলপার, হকার, নির্মাণ শ্রমিকরা এই তীব্র তাপকে উপেক্ষা করেই কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার জানিয়েছে, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংশসহ ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা কমার কোনো লক্ষণ নেই খুব তাড়াতাড়ি। মৌসুমি বায়ু এখনো বাংলাদেশ উপকূল থেকে অনেক দূরে আছে। টেকনাফের উপকূলে আসতে পারে ১২ জুনের দিকে। এরপর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটের দিকে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে দেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এই বৃষ্টি। তবে তার আগে ১২ জুন থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু আসার আগের সময়ে আবহাওয়া এমনই থাকে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় তাপমাত্রা যা তারচেয়ে বেশি অনুভব করছে মানুষ। ঘাম হচ্ছে অতিরিক্ত। ফলে ভোগান্তিও বেশি।’

এদিকে দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও দেশের দু’এক জায়গায় গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে। তবে তাতে তাপ খুব একটা কমেনি। ফেনীতে দেশের সর্বোচ্চ ১২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তারপরও সেখানে তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই বৃষ্টি হলেও তাপ কমছে না। কারণ, যে পরিমাণ বৃষ্টি হলে তাপ কমবে, তা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। সোমবার সবশেষ আবহাওয়ার বার্তা অনুযায়ী, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাজধানীতে তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাত হওয়ায় বাতাসে বাড়তে শুরু করেছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। তাপপ্রবাহের মধ্যে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়লে ভ্যাপসা গরম আরও বাড়ে। তাপপ্রবাহের ফলে গরমে শরীরে যে ঘাম হয়, জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে সেই ঘাম বাতাস শুষে নিতে পারে না। ফলে শরীরে তাপ না কমায় গরমের অনুভূতি বাড়তে থাকে।

আবহাওয়াবিদরা আগেই জানিয়েছেন, চলতি বছর গরমে অস্বস্তি বাড়তে পারে। কেননা, শুরু থেকে দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু কম হওয়ার কারণে তাপপ্রবাহের মাত্রা ও বিস্তার বেশি ছিল। গত এপ্রিলেও তাপমাত্রা উঠেছিল রেকর্ড পরিমাণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও আবহাওয়া বিজ্ঞানী ডক্টর তৌহিদা রশিদ একটি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের (পেরুর কাছের অংশে) পৃষ্ঠের তাপমাত্রার ওপর সারা পৃথিবীর আবহাওয়া নির্ভর করে। সেখানে তাপমাত্রা বেশি থাকলে আমরা তাকে এল নিনো বলি। আর তাপমাত্রা কম থাকলে বলা হয় লা নিনা। আমরা এখন এল নিনো ফেজে ঢুকছি। জুন-জুলাই মাসে পুরোপুরি ঢুকে যাবে। এই অবস্থা কখনো তিন বছর, কখনো পাঁচ বছর কখনো আবার সাত বছর স্থায়ী হয়। অর্থাৎ ওইদিকে ঠান্ডা বেশি থাকলে এশিয়ার এই দিকে গরম বেশি থাকে। এই প্রক্রিয়াটা তিন থেকে সাত বছর ঘুরে ফিরে স্থায়ী হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ১০ মাসে সারা পৃথিবীর তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। চলতি বছর ১ দশমিক ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। কাজেই এবারের তাপপ্রবাহের পেছনে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের (বৈশ্বিক উষ্ণায়ন) প্রভাব রয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ তবে তীব্র এই গরমের মধ্যেও দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
shwapno

উপরে