বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় একদিনে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানান, আজ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের নিরিখেও একই সময়ে মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টি ঝরার তথ্য নথিবদ্ধ হয়েছে। নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে ঝরেছে ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ঝরেছিল ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি। তখন পর্যন্ত এটিই মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ছিল বলে জানান আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক।
শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত একদিনে চাঁদপুরে বৃষ্টি ঝরেছে ২৪২ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ১৭৯, ফরিদপুরে ১৭১, চট্টগ্রামে ১৬৪, নারায়ণগঞ্জে ১৬১, মাদারীপুর, ফেনী ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১৬০, বরিশালে ১৪১, রাঙামাটিতে ১৪০, কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ১৩১, মানিকগঞ্জের আরিচায় ১১৯, বান্দরবানে ১১৩, বগুড়ায় ১১২ এবং নেত্রকোণায় ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে কম-বেশি বৃষ্টি ঝরেছে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতিভারি বৃষ্টিপাত।
মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হয়, যা পরে আরও ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় নিম্নচাপে পরিণত হয়। পরে সেটি পরিণত হয় গভীর নিম্নচাপে।
রাতেই সেটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। এর প্রভাবে শুক্রবার ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সতর্কবার্তায় বলা হয়, শুক্রবার সকাল ৯টায় স্থল নিম্নচাপ টাঙ্গাইল ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর বা উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝড়িয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে পারে।
নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও আশাপাশে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে সমুদ্র বন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দরকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত।