নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটের জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ কয়েকটি স্থানে ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।
রোববার রাত আড়াইটার দিকে সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রাম, ভোরের দিকে বাখরশাল গ্রাম এবং সোমবার সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামের বাঁধ (স্থানীয়ভাবে ‘ডাইক’ নামে পরিচিত) ভেঙে গেছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার দুই মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই ডাইকের উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করতেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডাইকের উপর বস্তা ফেলতেছে। কয়টি ডাইক ভেঙেছে সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ড বলতে পারবে।’
এলাকার কতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সঠিক তথ্য এখনই বলা যাবে না। প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে। আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী ‘ডাইকের’ তিনটি স্থানের আশপাশের প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া পৌর শহরের নিকটবর্তী কেছরী গ্রামের ‘ডাইকের’ উপর দিয়ে শহরে ঢুকছে কুশিয়ারা নদীর পানি। মাইজকান্দী গ্রামের ‘ডাইকের’ অংশ ধসে পড়েছে নদীতে।
জকিগঞ্জ ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতিরচক, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, খলাছড়া ইউনিয়নের একাধিক স্থান, বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিল্লাকান্দী, আমলশীদসহ অর্ধশতাধিক জায়গায় ‘ডাইকের’ উপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। স্থানীয়রা বালু ভর্তি বস্তা ফেলে ‘ডাইক’ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় জকিগঞ্জ বার বার প্লাবিত হচ্ছে। রোববার থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ সেদিকে লক্ষ্য রাখছেন না। বার বার বস্তার চাহিদা জানানো হলেও বস্তা পাওয়া যাচ্ছে না।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি চারটি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তবে অন্য নদ-নদীর পানি এখনও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।’
জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার দুই মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে নদী তীরবর্তী সাত থেকে আট কিলোমিটার এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘ডাইকের’ ওপর বস্তা ফেলে পানির প্রবেশ বন্ধে চেষ্টা করছে বলে জানান প্রকৌশলী।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪০৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে; যা ছিল চলতি বছরের সর্ব্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। তবে আরও বৃষ্টি হতে পারে।