শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

বসন্ত মানেই নতুনেরে আহ্বান

বাপ্পি সাহা
  ৩০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বসন্ত মানেই নতুনেরে আহ্বান

বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানেই একগুচ্ছ কবিতা, গান, ভালোবাসার পঙক্তিমালা।

বসন্ত মানেই পূর্ণতা/বসন্ত মানেই যেন শূন্য থেকে শুরু হওয়া/বসন্ত মানেই মনকে আন্দোলিত করা সুন্দরের আহ্বান। ঘুরে ফিরে বড্ড কেটে যাচ্ছে যে দিন, তোমার প্রতি বাড়ছে, বাড়ছে আমার ঋণ।

তেমনি বছর ঘুরে আসে আবারো বসন্ত। বসন্ত ষড়ঋতুর সর্বশেষ ঋতু। বসন্তত্মকে বলা হয় ঋতুর রাজা, ফাল্গুন এবং চৈত্র মাস মিলে হয় বসন্ত ঋতু। এ ঋতুর আগমন ঘটে শীত চলে যাবার পর এবং স্থায়ী গ্রীষ্ম আসার আগ পর্যন্ত। পৃথিবীর অনেক প্রান্তে এই ঋতুতে ফুল ফুটে, গাছে নতুন পাতা গজায়। বসন্ত ঋতুতে রাঙিয়ে শিমুল পলাশ ফোটে। প্রকৃতিতে তাই লেগে যায় যেন রঙের ছোঁয়া। দক্ষিণা দুয়ারে বহে ফাগুনের হাওয়া। কোকিলের কণ্ঠে বাজে বসন্তের গান। ফুলে ফুলে ভ্রমরও করে খেলা। সব কিছুই জানান দেয় বসন্ত যেন বাসন্তী সাজে।

'ফুল ফুটেছে বাগানে/ এসেছে বসন্ত ফাগুনে/ ভালোবাসা হোক, ভালোলাগা হোক/সময় অসময়ে।'

বসন্তের এই সমারোহে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগে যায় দোলা। শীতকালে ঝরে পড়া পাতার ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে গাছে গাছে আবার নতুন পাতা গজায়। গাছগুলো নতুন করে সবুজ পাতায় ভরে যায়, পাতার ফাঁকে বসে কু-হু কু-হু গান ধরে কালো কোকিল। ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছগাছালি। মনের আনন্দে পাখিরা গান গায়।

তাইতো বসন্ত নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেকেই লিখেছেন গান, কবিতা। সত্যি বলতে বসন্ত নিয়ে বর্তমান সময়ে খুব একটা রচিত হয়নি গান-কবিতার পঙক্তিমালা। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্ত নিয়ে অনেক গান-কবিতা লিখেছেন। তার মায়ার খেলা গীতিনাট্যের 'আহা আজি এই বসন্তে, এতো ফুল ফোঁটে, এতো বাঁশি বাজে এতো পাখি গায়।'

কাজী নজরুল ইসলাম বসন্ত নিয়ে লিখেছেন একটি গানে- 'বসন্ত আজ আসলো ধরায়, ফুল ফুটেছে বনে বনে, শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন বনে।' অথবা 'বসন্ত এলো এলো এলোরে, পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে।'

শীতকালকে অনেকে বুড়ি সাথে তুলনা করে বলেছেন, শীতের বুড়ি চলে যাওয়ার পর বসন্তকাল বাংলাদেশের প্রকৃতিতে রমণীয় রূপে আসে। সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। তাই কবির ভাষায়- 'ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত'।

বসন্তকে সামনে রেখে চলে গ্রাম বাংলায় মেলা, সার্কাসসহ নানা বাঙালি আয়োজনের সমারোহ। ভালোবাসার মানুষেরা মন রাঙাবে বাসন্তি রঙ্গেই। শীতের সঙ্গে তুলনা করে চলে বসন্তকালের পিঠা উৎসবও।

বসন্তকে নিয়ে যেমন আনন্দ উচ্ছ্বাস আছে, তেমনি আছে বিরহের সুরও। প্রেম আর ভালোবাসার ফাঁকে ফাঁকে অভিমান বিচ্ছেদও চলে সমানভাবে। যারা এই বসন্তে তাদের মনের মানুষ থেকে দূরে আছেন তাদের জন্য লেখা গান- 'কেউ বলে ফাল্গুন, কেউ বলে পলাশের মাস, আমি বলি আমার সর্বনাশ, কেউ বলে দখিনা কেউ বলে মাতাল বাতাস, আমি বলি আমার দীর্ঘশ্বাস।' এ থেকেই বোঝা যায় যে, বাঙালি বসন্তকে জড়িয়ে রাখে হৃদয়ের একেবারে কাছে। তারা বসন্তে মাতে নানা আনন্দ-উৎসবে। আর এসব বসন্তের উৎসবে আলো ছড়ায় বসন্তের গান ও কবিতা। 'সুখে আছে যারা, সুখে থাক তারা, সুখের বসন্ত, সুখে হোক সারা'। কবিগুরুর এই পঙক্তিমালা আমাদের ছুঁয়ে যাক বার বার। বসন্তময় জীবনে লাগুক প্রাণের দোলা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে