শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

আরেকজনের জন্য জেল খেটেছিলেন এবার নিজেই ভোগ করবেন ৬ বছরের কারাদন্ড

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
আরেকজনের জন্য জেল খেটেছিলেন এবার নিজেই ভোগ করবেন ৬ বছরের কারাদন্ড

পরিচয় গোপন করে অন্যের হয়ে সাজা খাটার দায়ে দুইজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে মূল আসামি সোহাগ ওরফে বড় সেহাগকে ১০ বছর ও সোহাগের পরিচয় ধারণ করে কারাগারে যাওয়া মো. হোসেনকে ৬ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। কারাদন্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার সময় আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এর মধ্যে আসামি সোহাগকে পেনাল কোডের পৃথক তিন ধারায় ১০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। প্রত্যেক ধারার দন্ড পরপর চলবে বলে বিচারক রায়ে উলেস্নখ করেন।

অপরদিকে, দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. হোসেনকে দেওয়া তিন ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বিধায় তাকে দুই বছর কারাভোগ করতে হবে, একইসঙ্গে তার পূর্ববর্তী হাজতবাস বর্তমানে দেওয়া সাজা থেকে বাদ যাওয়ার শুধুমাত্র জরিমানা পরিশোধে তার মুক্তিতে বাধা নেই বলে রায়ে উলেস্নখ করেন আদালত।

২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর কদমতলী থানার একটি হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ, মো. মামুন শেখ ও রবিন শেখকে ভিকটিম হুমায়ুন কবির টিটুকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

রায় ঘোষণার সময় ওই ৩ জন আসামিই পলাতক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ নতুন ওকালতনামা যোগে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণপূর্বক উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে জামিনের প্রার্থনা করেন। কিন্তু আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে সাজা পরোয়ানাসহ জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর জনৈক সাংবাদিক আদালতে একটি দরখাস্ত দাখিল করে উলেস্নখ করেন, অনুসন্ধানে তিনি জানতে পেরেছেন, সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ নাম ধারণ করে যে আসামি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে সাজা ভোগরত অবস্থায় কারাগারে আছেন, সে আসামি মামলাটির প্রকৃত আসামি সোহাগ নন। প্রকৃত আসামি স্বাধীনভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে ওই মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, মামলাটির ১ নম্বর আসামির সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে অন্যান্য আসামির সঙ্গে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং রিমান্ড শেষে আসামি সোহাগকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক হন সোহাগ।

এ ঘটনাটি সামনে আসার পর সে সময় কারাগারে থাকা প্রকৃত আসামি সোহাগের ছবির সঙ্গে আত্মসমর্পণ করে জেলে যাওয়া সোহাগের মিল আছে কিনা তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন প্রদান করতে নির্দেশ দেন আদালত। সেই প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয় কারান্তরীণ সোহাগ প্রকৃত সোহাগ নন।

এরপর আদালতের নির্দেশে তদন্তে নামে পুলিশ। পুলিশ প্রতিবেদনে উলেস্নখ করে যে, প্রকৃত আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ বর্তমানে কারাগারের বাইরে আছে। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারির্ যাব-১০ কর্তৃক মূল আসামি সোহাগকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় ৪ জনকে আসামি করে ঢাকার দ্রম্নত বিচার ট্রাইবু্যনাল-৪ এর বেঞ্চ সহকারী মিজানুর রহমান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ৩১ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের ২১ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে দুই ম্যাজিস্ট্রেটসহ চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে