হালের নতুন প্রজন্মের ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত অভিনেতা শরিফুল রাজ। এক 'পরান' সিনেমার সুবাদে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান রাজ। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রাজের। বর্তমান সময়ে শরিফুল রাজের সিনেমা মানেই দর্শকপ্রিয়তা ছাড়িয়ে যায় বহুগুণে। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে রাজকে। তবে কাজের জায়গায় তিনি যে অনন্য তা প্রমাণ করলেন আরেকবার। এবার ঈদে তিন তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। বলা যায়, চলচ্চিত্র বরেণ্যপুত্র তিনি। এই তিনটি সিনেমার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে রাজের ব্যক্তিগত জীবনের সমীকরণ। এবার ঈদে মুক্তি পাওয়া রাজের তিনটি সিনোম হলো- 'ওমর' 'দেয়ালের দেশ' 'কাজলরেখা'। তিনটিই দুর্দান্ত সিনেমা।

নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের পঞ্চম সিনেমা 'ওমর'। যেখানে শরিফুল রাজের সঙ্গে আছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু, নাসিরউদ্দিন খান ও এরফান মৃধা শিবলু। সিনেমাটির চিত্রনাট্য করেছেন সিদ্দিক আহমেদ। ঈদে ২১টি হল পেয়েছে ছবিটি। জানা গেছে, প্রেক্ষাগৃহের মতো দর্শক সাড়ায় 'রাজকুমার'র পরেই অবস্থান করছে এটি। বিশেষ করে ছবিটির গল্প দর্শক-সমালোচকদের মুগ্ধ করছে। নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী তো 'ওমর' দেখে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি, হাউমাউ করে কেঁদেছেন নির্মাতাকে জড়িয়ে ধরে।

সরকারি অনুদানের 'দেয়ালের দেশ' সিনেমাটিতে রাজের বিপরীতে অভিনয় করেছেন শবনম বুবলী। পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমাটির কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন মিশুক মনি। রাজ-বুবলী ছাড়াও 'দেয়ালের দেশ' সিনেমায় অভিনয় করেছেন আজিজুল হাকিম, সাবেরী আলম, স্বাগতা, শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

এদিকে জনপ্রিয় নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে সিনেমা নির্মাণ করেছেন 'কাজলরেখা'। ঈদে সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। পরিচালনার পাশাপাশি এর চিত্রনাট্য ও সংলাপ বিন্যাস করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। সিনেমাটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন নবাগত মন্দিরা চক্রবর্তী। অন্যতম প্রধান অপর দুইটি চরিত্রে দেখা গেছে বর্তমান সময়ের প্রতিভাবান অভিনেতা শরিফুল রাজ ও রাফিয়াথ রশিদ মিথিলাকে। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন ইরেশ যাকের, আজাদ আবুল কালাম, খায়রুল বাসার, সাদিয়া আয়মান, শাহানা সুমী, রহমত আলী, গাউসুল আলম শাওন এবং আরও অনেকেই।

অভিনয়ে উজ্জ্বল সামিরা খান মাহি

সিনেমাটির গল্পে দেখা যায় ৪০০ বছর আগে নয় বছর বয়স হলেই সমাজের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ে দিতে হতো। কাজলরেখার বয়স যখন নয় হয়, তখন এক নতুন গল্প তৈরি হয়। এই ঐতিহাসিক পালা কাহিনীর জীবনযাপনের সঙ্গে নতুন জীবন মেলবন্ধন হওয়ার নয়। এর জন্য দরকার আরও উচ্চতর পঠনপাঠনের।

ব্যক্তিগত জীবনে ভালোবেসে নায়িকা পরীমনিকে বিয়ে করেছিলেন রাজ। কিন্তু বিয়ের দুই বছর পূর্ণ না হতেই ভেঙে গেছে তারকা দম্পতি শরিফুল রাজ ও পরীমনির সংসার। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন পরীমনি। সেই সঙ্গে রাজের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগও এনে পরীমনি তার নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, 'সরি বলা, না খেয়ে থাকা, পা ধরে মাফ করে দাও আর হবে না, এমনকি সুইসাইডের মতো হুমকিতেও বস্ন্যাকমেলের শিকার হতে হয়েছে আমাকে! সে কখনোই সম্পর্কটাকে ওউন করেনি। নিজের স্বার্থে ইউজই করে গেল প্রতিনিয়ত! আমি এমন ভয়ংকর একজন মানুষকে বারবার সুযোগ দিয়েছি। আমার সঙ্গে যে অন্যায়গুলো করেছে তাতে তার জেল হওয়ার কথা।'

তবে রাজ ছিলেন নিশ্চুপ। অবশেষে পরীর ডিভোর্স লেটার পাঠানোর চার দিন পর মুখ খুলে ছিলেন এ অভিনেতা। ডিভোর্স লেটার প্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে। পরীর দেওয়া তালাকের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন রাজ।

শরিফুল রাজ তখন গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমার প্রাক্তনের পাঠানো চিঠি হাতে পেয়েছি। আলহামদুলিলস্নাহ! তার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাচ্ছি। তাকে ধন্যবাদ দিতে চাই, আমাকে আমার জীবনের সেরা অর্জন রাজ্যকে উপহার দেওয়ার জন্য। রাজ্যের জন্য যা কিছু ভালো, বাবা হিসেবে আজীবন তা করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।'

দর্শকদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে রাজ বলেন, 'আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে অনুরোধ, আমার বাচ্চার মায়ের অসম্মান হয় এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকবেন। আগামীতে আমার ব্যক্তিগত জীবন একান্তই আমার থাকবে। সেই চেষ্টায় আপনাদের সহযোগিতা আশা করছি।'

পরীমনির অভিযোগ নিয়েও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজ। তার দাবি, পরীমনির কোনো অভিযোগ সত্য নয়। পরী এখন মিথ্যাচার করছে। পরীর সিদ্ধান্তের ওপর সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে তার। তবে কোনো অভিযোগকে প্রশ্রয় দিতে চান না তিনি।

একমাত্র সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে রাজ জানান, এ বিষয়ে যা বলার তা তার আইনজীবী বলবেন। মাত্র ৭ দিনের পরিচয়ে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের 'গুণিন' সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর বিয়ে করেন শরিফুল রাজ ও পরী। গত বছরের শেষ দিন পরীর ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানা যায় সংসার জীবনে ভালো নেই তারা। এরপর কয়েকবার বিচ্ছেদের গুঞ্জনও শোনা যায়।