ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের আবেদন ও চাঁদা গ্রহণ কাল রবিরার থেকে শুরু হচ্ছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কোম্পানিটি আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টাকা তুলবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় জন্মনিরোধক পিল ও ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির কাট অফ প্রাইস নির্ধারন করা হয়েছে ৩৪ টাকা। কাট অফ প্রাইসের ৩০ শতাংশ কম দামে ২৪ টাকা করে আবেদনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা প্রতিটি শেয়ার কিনতে পারবে।
কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত প্রসপেক্টাস অনুসারে বিগত নয় মাসে (১ জুলাই ২০২৩- ৩১ মার্চ ২০২৪) কোম্পানিটির ইপিএস (শেয়ার প্রতি আয়) দাঁড়িয়েছে ২.৫৮ টাকা। যা আগে বছরে একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি। বিগত ১ জুলাই ২০২২ থেকে ৩১ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ছিল ১.৯০ টাকা। সেই হিসেবে নয় মাসে আগের তুলনায় শূণ্য দশমিক ৬৮ টাকা।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, টেকনো ড্রাগস কোম্পানিটি বাংলাদেশের ওষুধের বাজারে এক অনন্য নাম। প্রতিষ্ঠালগ্্ন থেকেই কোম্পানিটি বাংলাদেশের বাজারে দুষ্পাপ্য ও অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যুহার কমানো এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছে। আর সেটি সম্ভব হয়েছে টেকনো ড্রাগসের কারণে। কারণ বাংলাদেশ সরকার জন্মনিরোধকসহ যেসব অতীব প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে থাকে। তার সিংহভাগই উৎপাদন করে থাকে টেকনো ড্রাগস লিমিটেড।
টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব দেবাশীষ দাশ গুপ্ত বলেন, বাংলাদেশ সরকার জন্মনিয়ন্ত্রণে যেসব ওষুধ সরকারি ক্রয়াদেশের মাধ্যমে কিনে থাকে তার মধ্যে টেকনো ড্রাগস দুই তৃতীয়াংশ ওষুধের ক্রয়াদেশ পেয়ে থাকে। সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস সরকারের পুরো চাহিদা পূরণ করতে পারে না। মূলত টেকনো ড্রাইসই ব্যতিক্রমধর্মী এবং জনসেবামূলক এইসব ওষুধ উৎপাদনের মাধ্যমে সরকারকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, জন্মনিরোধক এসব ওষুধ ছাড়াও কোম্পানিটির বাংলাদেশের বাজারের জন্য ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন করে আসছে। বাংলাদেশে মাত্র দুইটি কোম্পানি বিকন ফার্মা ও টেকনো ড্রাগস মরণব্যাধি ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন করে থাকে।
দেবাশীষ দাশ গুপ্ত আরও বলেন, দেশে ভ্যাটেনারি ওষুধের প্রবর্তক টেকনো ড্রাগস। কোম্পানিটি বর্তমানেও ভ্যাটেনারি ওষুধটি তৈরি করছে। শুরু থেকেই কোম্পানিটি ওষুধ উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আমিষের চাহিদাপূরণ এবং খামারিদের লাভবান করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধির পাশাপাশি অতীব প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা বেড়েছে। অধিকহারে মানুষ বেড়ে যাওয়ায় অল্প জমিতে বা খামারে বেশি পরিমাণ মাংস ও ডিম উৎপাদনের প্রয়োজন পড়ছে। সেই কারণে টেকনো ড্রাগ জনমানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নতুন নতুন ওষুধ উৎপাদনে নজর দিচ্ছে। এভাবেই কোম্পানিটি ওষুধ শিল্পে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল বিকেল ৪টা থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত কোম্পানিটির বিডিং (নিলাম) অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে টেকনো ড্রাগসের কাট-অব প্রাইস (প্রান্তঃসীমা মূল্য) নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ টাকা। তবে আইপিও আবেদনে ৩০ শতাংশ কমে অর্থাৎ ২৪ টাকা করে সাধারণ শেয়ার পাবেন বিনিয়োগকারীরা। সেটিরই আবেদন আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে।
গত ৭ মার্চ আইপিও মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন পায় কোম্পানিটি। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। আইপিও থেকে অর্থ উত্তোলন করে কোম্পানিটি নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, বিএমআরই (নরসিংদী ফ্যাক্টরি), ভবন নির্মাণ (গাজীপুর ফ্যাক্টরি), আংশিক ঋণ পরিশোধ এবং ইস্যু ব্যবস্থাপনা খরচ খাতে ব্যয় করবে।
প্রসঙ্গত, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড ২০০৯ সালে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। তবে, কোম্পানিটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ২০১০ সালের ১ জুলাই। কোম্পানিটি প্রথমে যাত্রা শুরু করে ভেটেনারি প্রোডাক্ট দিয়ে। দেশে ভেটেনারি প্রোডাক্টের প্রবর্তক টেকনো ড্রাগস। পরবর্তীতে মানুষের ওষুধ নিয়ে কাজ শুরু করে। কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ওষুধ রপ্তানিতে চতুর্থ স্থান অর্জন করে। এরপর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে তৃতীয় স্থান অর্জন করে।
কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড এবং ইবিএল ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড।
যাযাদি/ এস