বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

আপনার কণ্ঠ, আপনার শক্তি 

  ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৩০
আপনার কণ্ঠ, আপনার শক্তি 
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের আত্মপ্রকাশের অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম হলো কণ্ঠস্বর। এটি কেবল শব্দের মাধ্যম নয়-বরং যোগাযোগ, আবেগ, চিন্তা, সৃজনশীলতা এবং সমাজে নিজের অবস্থান তুলে ধরার এক অনন্য উপায়। গান, বক্তৃতা, পাঠদান, অভিনয় কিংবা দৈনন্দিন আলাপ-সবক্ষেত্রেই কণ্ঠস্বর আমাদের ব্যাক্তিত্বের প্রমাণ দেয়। এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটির সুরক্ষায় সচেতনতা তৈরি করতে প্রতি বছর ১৬ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব কণ্ঠস্বর দিবস (World Voice Day)।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলে "জাতীয় কণ্ঠস্বর দিবস" হিসেবে শুরু হয় এই দিবসটির। ব্রাজিলের ল্যারিঙ্গোলজি ও ভয়েস বিশেষজ্ঞদের যৌথ উদ্যোগে এটি চালু হয় ডঃ নেদিও স্টেফেনের নেতৃত্বে। পরবর্তীতে আর্জেন্টিনা, পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই উদ্যোগ। ২০০২ সালে American Academy of Otolaryngology - Head and Neck Surgery আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি স্বীকৃতি দেয় এবং 'World Voice Day' হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

২০২৫ সালের বিশ্ব কণ্ঠস্বর দিবসের মূল প্রতিপাদ্য- "আপনার কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করুন"- যার লক্ষ্য হলো মানুষকে তাদের কণ্ঠস্বরের প্রতি যত্নবান করে তোলা। ENT বিশেষজ্ঞ, স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথলজিস্ট, হেড-নেক সার্জনসহ বিভিন্ন পেশাদার এই দিনে একত্র হয়ে কণ্ঠস্বর স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেন। বিশ্বে প্রায় ৭% মানুষ কণ্ঠস্বর-সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন। এসব সমস্যা হালকা কন্ঠ পরিবর্তন থেকে শুরু করে স্থায়ীভাবে কথা বলতে অক্ষম হওয়া পর্যন্ত হতে পারে। গলা বসে যাওয়া, কর্কশতা, ব্যথা, স্বর পরিবর্তন, কণ্ঠ ক্লান্তি ইত্যাদি লক্ষণগুলিকে অবহেলা করলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে

সুস্থ ও শক্তিশালী কণ্ঠস্বর ধরে রাখতে কিছু সচেতন অভ্যাস মেনে চলা উচিত:

* উচ্চ স্বরে বা ফিসফিস করে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।

* ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।

* ধূলাবালি ও ধোঁয়াপূর্ণ পরিবেশ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।

* মদ্যপান পরিহার করুন।

* অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম খাবার-পানীয় পরিহার করুন।

* তৈলাক্ত, ভাজাপোড়া এবং অতিরিক্ত ঝাল খাবার এড়িয়ে চলুন।

* পর্যাপ্ত পানি পান করুন (দৈনিক অন্তত ৮-১০ গ্লাস)।

* ঘুমানোর কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন।

* হাসিখুশি থাকুন এবং মানসিক চাপ কমান।

* পরিমিত আহার ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

* কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে কথা বলা এড়িয়ে চলুন।

শিক্ষকগণ ক্লাসে লাউড-স্পিকার ব্যবহার করুন।

মাস্ক পরুন, বিশেষত দূষণ বা সংক্রমণ প্রবণ জায়গায়।

কন্ঠস্বরের সমস্যা দেখা দিলে সময়মতো ENT বিশেষজ্ঞ, স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট বা মনোবিজ্ঞানীর শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। অ্যালার্জি, GERD বা থাইরয়েড সমস্যার পর কণ্ঠের মানে পরিবর্তন ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

কণ্ঠস্বর শুধু শব্দ নয়, এটি আমাদের আত্মার প্রকাশ। প্রতিটি কন্ঠের মধ্যে লুকিয়ে আছে ভাব, ভাষা ও বলার শক্তি। আসুন, বিশ্ব কণ্ঠস্বর দিবসে আমরা অঙ্গীকার করি-নিজের কণ্ঠের যত্ন নেব, কারণ "আপনার কন্ঠ, আপনার শক্তি"।

মো: রাহাতুল ইসলাম স্পিচ এন্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট

যাযাদি/ এমএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে