আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, আর্থ-সামাজিক অবস্থার টানপোড়েন, কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং পারিবারিক ও সামাজিক অতিরিক্ত প্রত্যাশার ভার আমাদের ক্রমাগত মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত করে তুলছে। প্যানিক অ্যাটাক কেবলমাত্র ব্যক্তিগত সমস্যা নয় বরং এটি আমাদের সমাজের এক অদৃশ্য নীরব ঘাতকের প্রতিচ্ছবি।প্যানিক অ্যাটাক সাময়িক মানসিক অবস্থা যা ভয় ও উদ্বেগের কারণে সৃষ্টি হয়।
প্রথমেই প্যানিক অ্যাটাক কি তা জানা জরুরি। প্যানিক অ্যাটাক হলো সেই পরিস্থিতি যখন শরীর একই সাথে শারীরিক ও মানসিক তীব্র উপসর্গে আক্রান্ত হয় এবং এর ফলে প্রচন্ড ভীত হয়ে পড়ে।
প্যানিক অ্যাটাকের উপসর্গগুলো হলো-
(১) শ্বাসকষ্ট (২)হার্ট বিট বাড়ে (৩) বুকে চাপ অনুভব করা (৪) ঘাম হওয়া (৫) বুকে ব্যথা (৬) অসাড়তা (৭) বমি বমি ভাব (৮) মৃত্যু ভয় ইত্যাদি। কারো প্যানিক অ্যাটাক দেখা দিলে তৎক্ষনাৎ করনীয় কি হতে পারে তা জানা থাকা প্রয়োজন।(১) প্রথমেই দাঁড়িয়ে থাকলে বসার ব্যবস্হা করতে থাকবে (২) ঘিরে না রেখে আলো-বাতাস এর সংস্পর্শে বিশ্রাম নিতে দিতে হবে (৩)মনোযোগ অন্য দিকে নিতে হবে (৪)অনুমতি ব্যতীত তাকে কোন ভাবেই স্পর্শ করা যাবে না (৫) প্রয়েোজনে পানি পান করাতে হবে (৬) কৌতুহল বশত জোর করে কোন ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া যাবে না (৭) প্রধান সমস্যাটি কি তা জানার চেষ্টা করতে হবে (৮) নাক দিয়ে শ্বাস নেয়া এবং মুখ দিয়ে তা বের করা সহ মাসল রিলাক্স করার বিষয়ে সাহায্য করতে হবে। প্যানিক অ্যাটাক সাধারণত ৫-২০ মিনিট পর্যন্ত স্হায়ী হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত স্হায়ী হতে পারে। প্যানিক অ্যাটাক দেখা দিলে অতি সত্বর রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সেই সাথে প্যানিক অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয় হলো (১) স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট শিখতে হবে (২) ট্রিগার এড়িয়ে যেতে হবে (৩) নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা প্রয়োজন (৪) সুষম খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে হবে (৫) কফি,আ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার করতে হবে (৬) দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। (৭) পরিবার বা প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে (৮) স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
গান শোনা, ছবি আকা,বাগান করা, ডায়েরি লিখা প্যানিক আ্যাটাকের সম্ভাবনাকে অনেক কমিয়ে দেয়। গ্রাউন্ডিং টেকনিক, ব্যায়াম ও ইতিবাচক মনোভাবের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পরিবার,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেএে সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্যকে এখনো তেমন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। একটি সুস্থ, ভারসাম্যপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল সমাজ গঠনের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সকলকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার বিষয়ে কাজ করতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যক্ষ-কাম-অধীক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ফার্মগেট, ঢাকা।
যাযাদি/ এসএম