বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬

স্বাস্থ্যে প্রত্যাশার প্রতিফলন নেই, মত বিশেষজ্ঞদের 

যাযাদি ডেস্ক
  ০২ জুন ২০২৫, ২০:৫৬
স্বাস্থ্যে প্রত্যাশার প্রতিফলন নেই, মত বিশেষজ্ঞদের 
ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ যেমন বাড়েনি, তেমনই স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশও প্রতিফলিত হয়নি। তাছাড়া আগের মতই বরাদ্দের পুরো অর্থ খরচ করতে না পারার আশঙ্কা রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।

আজ সোমবার বিকালে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

1

নতুন অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের জন্য ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং জিডিপির শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ছিল ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। ফলে আগের বারের চেয়ে এবার বরাদ্দ বেড়েছে ৫০১ কোটি টাকা।

গত অর্থ বছরে বরাদ্দের পুরো অর্থ খরচ করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যে কারণে সংশোধিত বাজেটের আকার কমিয়ে ২৭ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা করা হয়, যা বিদায়ী অর্থবছরের মোট সংশোধিত বাজেটের ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং জিডিপির শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশে দাঁড়ায়।

এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জন্য ৩১ হাজার ২২ কোটি এবং পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় প্রায় ১৭ হাজার ৫২০ কোটি টাকা।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে সব নাগরিককে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে সেবার পরিধি বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দক্ষ জনবল নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের শূন্য পদ পূরণে চিকিৎসক, সেবিকা, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়োগ ত্বরান্বিত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’

এবারের বাজেটে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও কর অব্যাহতি সুবিধা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া রেফারেল হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি ৫০ শয্যার বেশি সব হাসপাতাল স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক ও কর হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘ওষুধ শিল্পের এই সুযোগটি সম্প্রসারণ করায় বাংলাদেশি রোগীদের অনেক উপকার হবে। বিশেষ করে ক্যান্সারের ওষুধ হাইলি সফিস্টিকেটেড, বাংলাদেশে তৈরি হলে দাম খুবই কম পড়ে, ২৫-৩০ শতাংশে নেমে আসে। এটার দাম কমালে ক্যান্সার রোগীদের খুব বড় রিলিফ হয়। কারণ ক্যান্সারের ওষুধ দীর্ঘসময় ধরে চলে, তাদের অনেক ধরনের ওষুধ খেতে হয়। ওষুধ তৈরির কাঁচামাল ট্যাক্স বেনিফিট পেলে আমরা যেকোনো মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির সঙ্গে কমপিট করতে পারব ‘

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন,‘ জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় সরকার সবক্ষেত্রেই সংস্কারের কথা বলছে। সেই অনুযায়ী স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনও কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। তার প্রত্যাশা ছিল, এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি হবে। গত কয়েকবছর ধরে বাজেটে স্বাস্থ্যের বরাদ্দ ১ শতাংশের নিচে থাকে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল সেটা ৫ শতাংশে উন্নীত করা। কিন্তু আগে যেমন ছিল, এবারও তাই হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, বাজেটের বরাদ্দ ব্যবহার করে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন এবং জনবান্ধবমুখী গতি আনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা নেই। সেটি সক্ষম করার জন্য যে দিকদর্শন দরকার- তার অর্থনৈতিক ভাষ্য হবে বাজেট; কিন্তু তা হয়নি। আমাদের ভাবনা ছিল যে কিছু পরিবর্তন হবে, যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে একটি নতুন ধারা তৈরি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে স্বাস্থ্যখাতে কোনো পূর্ণাঙ্গ সেবাদান পরিকল্পনা নেই, কিন্তু সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে সেটি ছিল। সেই পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে এবারের স্বাস্থ্য বাজেট তৈরির সুযোগ ছিল, কিন্তু তা হয়নি।’

বাজেটে চিকিৎসাখাতে বরাদ্দ অর্থের সঠিক ব্যবহার যেন হয়, সেই দাবি করেছেন বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক নিরুপম দাস।

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বাজেটে বরাদ্দের অর্থ ফেরত যায়, খরচ হয় না। আমরা চাই যেন সঠিকভাবে, সঠিক জায়গায় খরচ করা হয়, জনসাধারণের উপকারে লাগে। আগেও বলেছি, আবারও বলি- স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ যেন ঠিকমতো ব্যবহার করা যায়, সেজন্য স্বাস্থ্য প্রশাসকদের প্রশিক্ষণ দিন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, “বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা যেন সংশোধিত বাজেটে এসে কমে না যায়। যে কারণে বাজেটের টাকা খরচ করতে পারে না, সেগুলো খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমার দুটি দাবি, প্রথম দাবি হচ্ছে এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দের পুরো অর্থই যেন খরচ করা হয়। সংশোধিত বাজেটে যেন এক টাকাও কর্তন করা না হয়।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় দাবি, যেসব কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাদ্দের টাকা খরচ করতে পারে না; সেই কারণগুলো খুঁজে বের করবে। এজন্য সরকার যেন জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে কাজ শুরু করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানে তারা কী কী কারণে টাকা খরচ করতে পারছে না, সেই কারণগুলো খুঁজে বের করে সেগুলোর সমাধান যেন করে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে