দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ-উল-আজহা। আর মাত্র কয়েক দিন পর মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই ঈদে কুরবানি সামনে রেখে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার লোহা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। কুরবানির ঈদে গরু, ছাগল, মহিষ জবাই ও গোশত কাটতে ব্যবহৃত হয় কামারদের তৈরি দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি। তবে কয়লার মূল্য ও মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ব্যস্ত সময়েও হাসি নেই কামারিদের মুখে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শিবচর, পাঁচ্চর, মাদবরের চর, চান্দের চর বাজার বিভিন্ন কামাররা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন। হাপর বা জাতি টানছে একজন। এর বাতাসে জ্বলছে কয়লা, সেই কয়লায় পুড়ছে লোহা। সেই দগদগে লাল লোহাকে পিটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ছুরি, চাপাতি।
কুরবানি পশু জবাইয়ের এসব অস্ত্র তৈরি করার সময় হাপরের ফোঁস ফাঁস আর লোহা পেটানোর টুং টাং শব্দে মুখর পুরো এলাকা। এর সঙ্গে চলছে পুরোনো দা-বঁটি ও ছুরিতে শান দেওয়ার কাজ। এভাবে ক্লান্তিহীন দিন পার করছেন শিবচরের কামারেরা।
তবে চায়না থেকে আসা মালামাল, লোহা, কয়লা ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর ঈদে কামারদের মুখে হাসি নেই।
ক্রেতাদের অভিযোগ, ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেওয়া হয়। ছুরি শান দেওয়ার জন্য পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু করে দেড়’শ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
লোহার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর দা, ছুরি ও চাপাতিসহ জিনিসের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ছোট ছুরি ২০০ থেকে ৩০০, বড় ছুরি ৪০০ থেকে ৭০০, দা ছোট ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, বঁটি বড় ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, চাপাতি ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থানীয় ক্রেতারা বলেন, ‘আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদ। গরু ও ছাগল জবাই দিতে এবং মাংস কাটতে দা, বটি, চাকু ও ছুরির প্রয়োজন। তাই বাজারে দা, বটি ও ছুরি কিনতে এসেছি। তবে গত বছরে এসব জিনিসের দাম খানিকটা বেশি। দাম বেশি হলেও কিনতে তো হবেই।’
প্রশান্ত কর্মকার, বিরেন কর্মকার,পরিতোষ কর্মকারসহ বেশ কয়েকজন কামার শিল্পী জানান, বলেন, সারাবছরই তারা দা, বটি, চাকু, ছুরি বিক্রি করেন। কিন্তু কোরবানির মৌসুমেই এসব সরঞ্জামের কেনাবেচার ধুম পড়ে। এবারও ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে কয়লা ও লোহার দাম খানিকটা বেড়ে যাওয়ায় কামারদের কাছ থেকে খানিকটা বেশি দামে এসব জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে। যার ফলে কিছুটা বেশি দামে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে।