প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হয়ে আচ্ছে চরের মানুষ! একটু অসুস্থ হলে মৃত্যুই পরিণতি হয়ে পরে তারা চরের মানুষগুলোর জন্য চিকিৎসা, হাসপাতাল, ক্লিনিক তো দূরের কথা, একজন এমবিবিএস ডাক্তারও নেই। চর মিনার বাজার থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিতে হয়, আর লালমনিরহাট কালিগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে চরবাসীকে ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার যেতে হয়। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য এম্বুলেন্স তো দূরের কথা, সেখানে কোন রিকশা-ভ্যান চলে না। যার কারণে চরে কোন মানুষ গুরুতর অসুস্থ হলে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুই যেন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।
চরে কোন মানুষ অল্প অসুস্থ হলে হাসপাতালে যাওয়ার কথা ভাবেন না। কারণ অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে আনা অত্যন্ত ঝক্কি-ঝামেলার ব্যাপার।
আজ সরে জমিনে দেখা গেল চরে রিকশা-ভ্যান না থাকায় রোগীকে একটি চৌকি বা বেঞ্চিতে শুইয়ে দিয়ে সেই চৌকির পাশে বাঁশ বেঁধে ঘাড়ে করে বেয়ে নদীর পাড়ে আনতে হয়। নদীর ঘাটে জরুরি বলে কোন কথা নেই, নৌকার নির্ধারিত সময়ই অসুস্থ রোগীকেও নদী পার করে আনতে হয়। আর এর জন্য টাকাও গুনতে হয় অনেক।
চরাঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ছে চরের জনসংখ্যা। হচ্ছে স্বাস্থ্যহানী। স্যানিটেশনের সুব্যবস্থা নেই। তারা খোলা আকাশের নিচে মলমূত্র ত্যাগ করে। বৃষ্টির পানিতে সেসব ধুইয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে নদীতে। সেই পানিতেই চলছে চরবাসীর গৃহস্থালির কাজ।
অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাসের ফলে শরীরে বাসা বাঁধছে খোশপাঁচড়াসহ নানা ব্যাধি।
চরের মানুষের স্বাস্থ্যবেসা নিশ্চিত করার জন্য স্থায়ী চিকিৎসালয় স্থাপন করা সময়ের দাবি। বিশেষ করে একজন সন্তানসম্ভবা নারীর যখন প্রসব ব্যথা ওঠে কখন তাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়ার কিছুই থাকে না এসব এলাকায়। এছাড়াও শিশু-বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়লে একই অবস্থা। প্রাচীন পদ্ধতি কাঠের চৌকিতে রোগীকে শুয়ে তাতে বাঁশ লাগিয়ে ঘাড়ে করে বহন করে অনেকপথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে আনতে হয়।
বাগডোগরা মিনার বাজার চরের মর্জিনা বেগম (৫০)। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রহর গুনছেন মৃত্যুর। জানতে চাইলাম, ডাক্তার দেখিয়েছেন? জবাবে মর্জিনার ছেলে বলেন, চরের মানুষের অভিশপ্ত জীবন কোথায় পাব ভালো ডাক্তার চরে ডাক্তার না থাকায় তিনি কবিরাজকে দেখিয়েছেন, তিনি পানি পড়া দিয়েছে খাওয়াইছি কাজ হয় নাই এখন হঠাৎ ধীরে ধীরে মৃত্যুর শয্যায় পড়ে গেছে আমার মা, তাই এভাবে কালীগঞ্জের হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছি তাও আবার কোন প্রকার গাড়ির ব্যবস্থা নেই তাই কালীগঞ্জে এসে গাড়ি নিলাম হাসপাতালে নিয়ে যাব ।
স্থানীয় একজন লিটন নামের ব্যক্তি জানান, প্রতিনিয়ত চরের মানুষের এই দুঃখ দুর্দশা দেখতে আর ভালো লাগছে না
আমরা এটার স্থায়ীভাবে সমাধান চাই।.সরেজমিন চরের বেশ কিছু গ্রামে দেখা যায়, ছোট ছোট শিশুদের হাতে-পায়ে চুলকানী, ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা, কাশি এসব তাদের নিত্যদিনের অসুখ। বয়স্ক লোকের পেটে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হাঁটুতে ব্যথা এসব লেগেই থাকে। নারীদের কোমরে ব্যথা, মাথা ঘোরা। অপুষ্ট মায়ের জনিত দেয়া অপুষ্টির শিকার শিশুগুলোর অবস্থা দেখলে তাদের দুরবস্থার প্রমাণ মেলে।
ছোট্ট ছোট্ট ঘরে ধুলোবালি মাখা খড়ের বিছানায় গাদাগাদি করে বেড়ে উঠা। ডায়রিয়া, নিমোনিয়া, পেটভর্তি কৃমি নিয়ে মাথামোটা পেটফোলা শিশুগুলোর বড়বড় চোখের অসহায় চাহনী বলে দেয় ওরা খুব কষ্টে আছে।
চারদিক নদী দিয়ে ঘেরা চরবাসীর অভিযোগ, তাদের ভোটে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হলেও সংসদ সদস্য তো দূরের কথা চেয়ারম্যানরাই তাদের কোনো খোঁজ-খবর রাখে না। চরে কোন পুলিশফাঁড়িও নেই। তাই বিচারের বিষয়ে তারা গ্রাম্য সালিশের ওপর নির্ভরশীল। এমনি
অযত্ন আর অবহেলায় রয়েছে মিনার বাজার, সহ লালমনিরহাট ও হাতিবান্ধা আদিতমারীর চর এলাকার মানুষগুলো।