শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সাশ্রয়ী মূল্যে পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এসি দিচ্ছে ওয়ালটন : মো. তানভীর রহমান

যাযাদি ডেস্ক
  ০৫ মে ২০২৪, ১৪:২৫
আপডেট  : ০৫ মে ২০২৪, ১৪:৩৯
মো. তানভীর রহমান, চিফ বিজনেস অফিসার, ওয়ালটন এয়ার কন্ডিশনার

প্রশ্ন : দেশে এসির বাজার কতটুকু। দেশের বাজারের চাহিদার কতটা সরবরাহ করতে পারছে আপনার প্রতিষ্ঠান?

মো. তানভীর রহমান : দেশে বিগত কয়েক বছর ধরে গরমের তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তীব্র দাবদাহের হাত থেকে রেহাই পেতে বাড়ছে এসির চাহিদাও। স্থানীয় বাজারে এ বছর এসির চাহিদা ৬ লাখ ইউনিট ছাড়াবে। বর্তমানে দেশের এসি বাজারে মার্কেট শেয়ারের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ওয়ালটন।

প্রশ্ন : আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান বাজারে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

মো. তানভীর রহমান : দেশের ক্রমবর্ধমান এসির বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রাখার লক্ষ্যে সাশ্রয়ী দামে পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী সর্বাধুনিক ফিচারের এসি উৎপাদন ও বাজারজাতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি আমরা। সেজন্য গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে বিপুল বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

প্রশ্ন : অন্য ব্র্যান্ডগুলোর থেকে আপনাদের এসিগুলোর স্বকীয়তা কি? কি কি আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা মিলছে আপনাদের এসিগুলোতে?

মো. তানভীর রহমান : ওয়ালটন বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠানÑ যার একটি স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন টিম রয়েছে। যেখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রকৌশলীদের দ্বারা প্রোডাক্টের ইনোভেশন নিয়ে কাজ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যতম বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এসি উৎপাদন করছে ওয়ালটনÑ যা বিএসটিআইয়ের ৬ স্টার রেটিং প্রাপ্ত। এসব এসিতে রয়েছে ডিজিটাল ডিসপ্লে সুবিধাÑ যার মাধ্যমে গ্রাহকরা সরাসরি এসিটির আওতায় রুম ও আউটডোর টেম্পারেচার, বিদ্যুৎ কনজাম্পশন রেট, গত মাস বা গত বছরের কনজাম্পশন রেট ইত্যাদি সুক্ষভাবে মনিটর করতে পারেন। এর বাইরে এসিতে আমরা কোটেক টেকনোলজি এনেছি। বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক যে পরিবেশ/আবহাওয়ার পার্থক্য রয়েছেÑ উদাহরণস্বরূপ উপকূলবর্তী এলাকা বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা। সেসব পরিবেশ ও আবহাওয়া উপযোগী করে এসি ডেভেলপ করা হয়েছে। যাতে এসির কন্ডেন্সার ও ইভাপোরেটর দ্বিগুণেরও বেশি স্থায়িত্ব বাড়বে। এতে গ্রাহকের মেইনটেন্যান্স খরচ বিক্রোয়ত্তর খরচ কমে যাবে এবং তাদের অর্থের সাশ্রয় হবে। ওয়ালটনের এসিতে স্মার্ট আইওটি প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই সংযুক্ত করা হয়েছে। এর নিত্যনতুন ইনোভেশনের কাজ চলছে। ফলে গ্রাহকরা আরো উন্নত ডিজিটাল সার্ভিস পাচ্ছেন। এছাড়া ওয়ালটন এসিতে যুক্ত রয়েছে ভয়েস কন্ট্রোল সুবিধা। যাতে একটি এসি বাংলা ও ইংরেজি দুই মাধ্যমেই কমান্ড নিতে সক্ষম। অর্থাৎ গ্রাহকরা বাংলা ও ইংরেজি দুই মাধ্যমেই ওয়ালটনের ভয়েস কমান্ড এসি পরিচালনা করতে পারেন।

প্রশ্ন : ক্রেতার কোন কোন চাহিদাগুলো বিবেচনায় রেখে এবার বাজারে এসি এনেছে আপনার প্রতিষ্ঠান?

মো. তানভীর রহমান : ক্রেতারা কম দামে সেরামানের পণ্যটি কিনতে চায়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে সাশ্রয়ী দামে আন্তর্জাতিকমানের সর্বোচ্চসংখ্যক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের পণ্য বাজারে ছেড়েছি আমরা। ওয়ালটন এসিতে রয়েছে এয়ার প্লাজমা প্রযুক্তি, আইওটি বেজড স্মার্ট কন্ট্রোল সিস্টেম, রিমোট ফাইন্ডার, ব্লুটুথ কন্ট্রোল, অফলাইন ভয়েস কন্ট্রোল, ইউভি কেয়ার, মরিচা প্রতিরোধক কোটেক টেকনোলজি, ফ্রস্ট ক্লিন, থ্রি-ইন-ওয়ান কনভার্টিবল টেকনোলজিসহ ইন্টিগ্রেটেড ৫-ইঞ্চি কালার টিএফটি ডিসপ্লে।

প্রশ্ন : বলা হচ্ছে, এসি এখন আর বিলাসী পণ্য নয়। সেক্ষেত্রে সল্প আয়ের ক্রেতাদের জন্য কতটা ভাবছে আপনার ব্র্যান্ড?

মো. তানভীর রহমান : এসি এক সময় উচ্চবিত্তদের বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হলেও সেই ধারণা এখন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। দেশে প্রতি বছরই বাড়ছে গরমের তীব্রতা। তীব্র দাবদাহ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সহনশীল নয়। অসহনীয় গরমে একটু প্রশান্তি পেতে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সামর্থ্যবানদের পাশাপাশি এখন নিম্ন এবং নিম্নমধ্যবিত্তরা এসি কিনছেন। ওয়ালটন দেশে এসি উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করার পর থেকেই এসির দাম সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে।

প্রশ্ন : এসি ব্যবহারে বড় প্রশ্ন বিদ্যুৎ খরচ। কম বিদ্যুৎ খরচের ক্ষেত্রে আপনাদের এসিগুলোর প্রযুক্তি কতখানি এগিয়ে?

মো. তানভীর রহমান : এসি কেনার পূর্বে ক্রেতারা এসির বিদ্যুৎ খরচের বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়। সেজন্য চলতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি বাজারে ছেড়েছি আমরা। যা বিএসটিআই কর্তৃক সিক্স-স্টার এনার্জি রেটিং সনদপ্রাপ্ত। যত বেশি স্টার রেটিং, বিদ্যুৎ খরচ তত কম। দেশের সর্ববৃহৎ ওয়ালটনের রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন টিমের নিত্য নতুন ইনোভেশনের কারণে প্রোডাক্টের মানও দিন দিন উন্নত হচ্ছে। গ্রাহকদের হাতে সাশ্রয়ী দামে সিএফসি ও এইচসিএফসি গ্যাসমুক্ত পরিবেশবান্ধব ও ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সর্বোচ্চ গুণগতমানের এসি তুলে দিচ্ছে ওয়ালটন।

প্রশ্ন : গ্রাহকসেবা ও সার্ভিসিং সুবিধা সরবরাহে কতটা নিবেদিত আপনার প্রতিষ্ঠান?

মো. তানভীর রহমান : গ্রাহকদের সাশ্রয়ী দামে সেরামানের এসি দেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা দিচ্ছে ওয়ালটন। সর্বোচ্চ গুণগতমানের নিশ্চয়তাসহ ওয়ালটন এসিতে গ্রাহকরা পাচ্ছেন ১ বছরের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি, কম্প্রেসরে ১০ বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি, ৩ বছরের স্পেয়ার পার্টস ওয়ারেন্টি এবং ফ্রি ক্লিনিং সার্ভিস। এছাড়া বাংলাদেশে আইএসও সার্টিফায়েড সর্ববৃহৎ সার্ভিস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ৮০টিরও অধিক সার্ভিস পয়েন্টের আওতায় ৩ হাজার ৫০০ এরও বেশি সার্ভিস পার্টনারের মাধ্যমে গ্রাহকদের দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ওয়ালটন।

অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি দেশব্যাপী চলমান ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন-২০ এর আওতায় ওয়ালটন এসি কিনে ‘ননস্টপ মিলিয়নিয়ার’ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন ক্রেতারা। রয়েছে কোটি কোটি টাকার নিশ্চিত উপহার। ইতোমধ্যে ওয়ালটন ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এসি কিনে মিলিয়নিয়ার হয়েছেন বেশ কয়েকজন ক্রেতা।

প্রশ্ন : এসি উৎপাদন শিল্পে বর্তমান প্রতিবন্ধকতাগুলো কি? আগামী অর্থবছর বাজেটে আপনাদের প্রত্যাশা?

মো. তানভীর রহমান : দেশে এসি উৎপাদন শিল্পের দ্রুত বিকাশে সরকারি নীতি সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া নীতি সহায়তাকে আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশে এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটিয়েছি। ওয়ালটনসহ যেসব কোম্পানি এগিয়ে এসেছে, তাদের প্রচেষ্টার ফলে এ খাত এখন ভালো অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। আমদানিনির্ভর এই শিল্প এখন স্থানীয় উৎপাদন নির্ভরতায় চলে এসেছে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের বিদ্যমান পলিসি সাপোর্ট অব্যাহত রাখা জরুরি। পাশাপাশি এনার্জি এফিসিয়েন্ট পণ্য উৎপাদনে আরো বেশি প্রণোদনা প্রদান করা উচিত। এছাড়া চিলার এবং কমার্শিয়াল এসিতে আমদানিতে শুল্ক আরো বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভিআরএফ এসির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করা প্রয়োজন। ওয়ালটনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ভিআরএফ ও চিলার কমার্শিয়াল এসি উৎপাদনকারী নবম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু, বিদ্যমান পলিসিতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।

এখনো ভিআরএফ-এর মতো উচ্চ প্রযুক্তির এসি উৎপাদনের কিছু কিছু কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক দিতে হচ্ছে। যার ফলে, উচ্চ প্রযুক্তির ভিআরএফ এসি আমদানির তুলনায় দেশে উৎপাদনে খরচ বেশি পড়ছে। এই দিকটিতে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দেয়া উচিত। আমাদানিকারকদের চেয়ে যেন স্থানীয় শিল্প বেশি সুবিধা পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে কর্মাশিয়াল এসিতে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানিমুখী হতে পারে বাংলাদেশ।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ থেকে এসি রপ্তানির পরিকল্পনা আছে কি না?

মো. তানভীর রহমান : ওয়ালটনের তৈরি আন্তর্জাতিকমানের এসি এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। স্থানীয় বাজারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারেও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত এসির শক্তিশালী অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছি আমরা। সেজন্য গঠন করেছি সুদক্ষ এবং চৌকস গ্লোবাল বিজনেস টিম। পাশাপাশি কয়েকটি দেশে সাবসিডিয়ারি এবং শাখা অফিস স্থাপন করেছি। এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ায় স্থাপন করেছি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার। সেখানে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের উদ্ভাবনী পণ্যের পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড, আবহাওয়া এবং ক্রেতাদের চাহিদা ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে