বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

 ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দি বিনিময়, আবেগঘন পরিবেশ

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ জুন ২০২৫, ১৪:২২
আপডেট  : ১০ জুন ২০২৫, ১৪:২৯
 ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দি বিনিময়, আবেগঘন পরিবেশ
বিনিময়ের পর ফিরে আসা ইউক্রেনীয় সেনারা। ছবি: রয়টার্স/ সংগৃহীত

চার বছর ধরে চলা যুদ্ধের শেষ নিয়ে কাছাকাছি পৌঁছাতে না পারলেও রাশিয়া ও ইউক্রেন সোমবার আবেগঘন পরিবেশের মধ্যে ২৫ বছরের কম বয়সী যুদ্ধবন্দিদের বিনিময় করেছে। এটি পরিকল্পিতি এক ধারাবাহিক বন্দি বিনিময়ের প্রথম ধাপ যা যুদ্ধের সবচেয়ে বড় বিনিময় হয়ে উঠতে পারে।

২ জুন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার ফল এ বিনিময়। ওই আলোচনায় উভয়পক্ষ থেকে অন্তত ১২০০ যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের ও যুদ্ধে নিহত কয়েক হাজার মৃতদেহ নিজে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার চুক্তি হয়।

1

চার বছর ধরে চলা ইউক্রেইন যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে ইস্তাম্বুলে দুইপক্ষ আলোচনায় বসলেও যুদ্ধ শেষ করা নিয়ে কাছাকাছিও পৌঁছতে পারেনি তারা। আলোচনায় দুই পক্ষ যে অল্প বিষয়ে একমত হতে পেরেছিল তার একটি এই যুদ্ধবন্দি ও নিহতদের মৃতদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার সমঝোতা।

এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই আরও তীব্র হয়েছে। সোমবার রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের বাহিনীগুলো ইউক্রেনের পূর্বমধ্যাঞ্চলীয় দনিপ্রোতে আরও অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। কিইভ জানিয়েছে, এরমধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলাটি চালিয়েছে মস্কো।

কিইভ থেকে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার যারা বাড়িতে ফিরেছেন তাদের মধ্যে কিছু ইউক্রেইনীয় সেনা যুদ্ধের শুরুর দিক থেকে রাশিয়ার হাতে বন্দি ছিলেন।

ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের প্রকাশ করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ইউক্রেনের ফিরে আসা বন্দি সেনারা উত্তর ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে যেখানে মিলিত হচ্ছিলেন সেখানে এক কর্মকর্তা এক মুক্ত সেনার হাতে একটি মোবাইল ফোন তুলে দেন যেন তিনি তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

ওই সেনা তার মাকে ফোন বলে বলেন, ‘মা, কেমন আছো? আমি ফিরে এসেছি, আমি বাড়িতে!’

রয়টার্স জানায়, প্রবল আবেগে ভেসে যেতে থাকা এই সেনাকে তার নিঃশ্বাস সামলাতেও কষ্ট করতে হচ্ছিল, প্রায় চিৎকার করে কথা বলছিলেন তিনি।

মুক্তি পাওয়া ইউক্রেনীয় সেনাদের এখান থেকে বাসে করে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় এক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে এবং গোসল, খাবার ও মোবাইল ফোন, জুতাসহ ‘কেয়ার প্যাকেজ’ দেওয়া হবে।

মুক্তির আনন্দের সঙ্গে বিষন্নতাও মিশে ছিল। কারণ হাসপাতালের বাইরে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই নারী। তারা যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া তাদের স্বজনদের খোঁজে এসেছেন।

তাদের অনেকের হাতে নিখোঁজ স্বজনের ছবি। তাদের আশা, ফিরে আসা যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে যদি কেউ তাদের প্রিয়জনকে চিনতে পেরে তার বিষয় কিছু জানাতে পারে। আর কিছু মানুষ আশা করছিলেন যারা মুক্তি পেয়েছেন তাদের মধ্যেই তাদের প্রিয় মানুষটি হয়তো থাকবেন।

৫২ বছর বয়সী এক নারী তার ছেলের ছবি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। তার ছেলে ২০২৪ এর সেপ্টেম্বরে নিখোঁজ হন।

চোখের পানি ফেলতে ফেলতে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল আমার জন্মদিন। আমি আশা করছি খোদা আমাকে একটা গিফট দেবেন আর তা হল আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।’

সোমবার কতোজন বন্দি বিনিময় হয়েছে তা কোনো পক্ষই প্রকাশ করেনি। শুধু রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, উভয় পক্ষ থেকেই সমসংখ্যক সামরিক বন্দি বিনিময় করা হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, এই বিনিময় রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কয়েক ধাপে পরিচালিত হবে।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের ফিরে আসা সেনারা এখন রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশে আছে। সেখানে তাদের মনোদৈহিক ও মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে তারপর আরও সেবা-যত্নের জন্য রাশিয়ায় পাঠানো হবে।

রোববার ক্রেমলিনের কর্মকর্তা ভ্লাদিমির মেডিনস্কি জানিয়েছিলেন, ৬৪০ জন যুদ্ধবন্দির প্রথম তালিকা ইউক্রেইনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে