শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পারমাণবিক হুমকি থামাতেই ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন

ইসরাইলি হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান নিহত
বিশেষ প্রতিনিধি
  ১৩ জুন ২০২৫, ০৮:৩০
আপডেট  : ১৩ জুন ২০২৫, ০৮:৫৪
পারমাণবিক হুমকি থামাতেই ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন
ফাইল ফটো

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ইসরায়েল শুক্রবার ভোরে ইরানের ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে চালানো এই অভিযানে ইসরায়েল মূলত ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র এবং সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করার লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই অভিযানকে ‘নির্দিষ্ট সামরিক অপারেশন’ উল্লেখ করে বলেছেন, এটি ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক হুমকি নির্মূলের জন্য নেয়া হয়েছে এবং প্রয়োজন মতো চলবে যতদিন হুমকি সম্পূর্ণরূপে দূর না হয়।

তেহরানে বিস্ফোরণ, সামরিক কর্মকর্তা নিহত

1
হামলার প্রাথমিক প্রভাবে তেহরানের চিটগার এলাকা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয়েছে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডসের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেন সালামী এই আঘাতে নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যু ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কের ইতিহাসে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইরানের বিভিন্ন সরকারি মিডিয়া ‘শহীদ’ হিসেবে তাকে সম্মানিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “ইরান গত কয়েক বছরে এত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করেছে যা নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট। আমাদের এই হুমকি থেকে বাঁচার জন্য আমরা এই অভিযান চালাচ্ছি।” তিনি আরও বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ করা হবে যতদিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়।

যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় সরাসরি জড়িত নয় বলে জানিয়েছে। মার্কো রুবিও, মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব, বলেন, “আমরা এই হামলায় যুক্ত নই। আমাদের অগ্রাধিকার মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।” যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে এই অঞ্চলে তার সামরিক কর্মীদের সরিয়ে নিচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ জানিয়েছেন, “এই হামলার তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরান থেকে মিসাইল এবং ড্রোন হামলার আশঙ্কা রয়েছে।” উভয় দেশ তাদের আকাশসীমা বন্ধ করেছে এবং সামরিক সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তর অস্থিরতার সূত্রপাত হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের কাছে উদ্বেগের বিষয় এই সংঘাত। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থা ও জাতিসংঘ শান্তি ও আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের অস্তিত্ব রক্ষা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এই হামলা প্রয়োজনীয়।

গত কয়েক বছর ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইরান গতকাল পর্যন্ত বলছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং পরমাণু অস্ত্র তৈরির ইচ্ছা নেই। কিন্তু ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, ইরানের এই কর্মসূচি বাস্তবে একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা।

মধ্যপ্রাচ্যে এটি নতুন করে সংকট সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই হামলা দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে