শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘প্রতিশোধের লাল পতাকা’ উড়ালো ইরান, যার অর্থ যুদ্ধ অনিবার্য

যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ জুন ২০২৫, ২২:৪৩
‘প্রতিশোধের লাল পতাকা’ উড়ালো ইরান, যার অর্থ যুদ্ধ অনিবার্য
শিয়া মুসলমানদের কাছে লাল পতাকা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে

ইরানে পবিত্র জামকারান মসজিদের চূড়ায় উত্তোলন করা হয়েছে ‘প্রতিশোধের লাল পতাকা’। দেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

সংবাদমাধ্যমটির প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, কুম শহরের জামকারান মসজিদের গম্বুজে লাল পতাকা ওড়ানো হয়েছে।

1

ফার্স বলেছে, পবিত্র জামকারান মসজিদের উপরে ওড়া এই লাল পতাকা হলো ‘প্রতিশোধ ও শোকের শক্তিশালী বার্তা’।

শিয়া মুসলমানদের কাছে লাল পতাকা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। সাধারণত মহররম মাসে কারবালার যুদ্ধে হজরত হোসেন (রা.) ও তার সাথীদের আত্মবলিদানের স্মরণে এই পতাকা উত্তোলন করা হয়। মহররমের বাইরে এর ব্যবহার অত্যন্ত দুর্বল বা অনিয়মিত হলেও এবার তা বিশেষ তাৎপর্য প্রকাশ করে।

পতাকায় লেখা রয়েছে, ‘ইয়া লা-সারাত আল-হুসেইন’ অর্থাৎ - হে হুসাইন (রা.)-এর প্রতিশোধ গ্রহীতারা।

ইসলামের নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হুসেন (রা.) কারবালার যুদ্ধে উমাইয়া খলিফা ইয়াজিদের সেনাদলের হাতে শহীদ হন।

কারবালার সেই আত্মবলিদানই সুন্নি ও শিয়ায় বিভাজন সৃষ্টি করে এবং হুসেন (রা.) ন্যায় ও আত্মমর্যাদার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই পতাকা উত্তোলনকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শক্ত ও স্পষ্ট হুঁশিয়ারি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এক্সে প্রকাশিত অপর এক ভিডিওতে দেখা গেছে, কুম শহরের জামকারান মসজিদে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ইরানের পতাকা হাতে নিয়ে ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন।

কুম রাজধানী তেহরান থেকে মাত্র ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এবং এটি ইরানের ধর্মীয় ও রাজনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিবেচিত হয়।

এর আগে শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় ভোরে চালানো একাধিক ইসরায়েলি হামলায় উচ্চপদস্থ সামরিক কম্যান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী, নারী ও শিশুসহ অনেক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ও উত্তেজনা প্রকাশিত হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, রাজধানীর ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের সদর দপ্তরেও হামলা হয়েছে। এরপর মধ্য ইরানে নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, ইরানে আগাম ও আত্মরক্ষামূলক হামলা চালানো হয়েছে। এদিকে, ইসরায়েলজুড়ে বিশেষ জরুরি অবস্থা জারি করেছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার।

ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, অদূর ভবিষ্যতে দেশটির সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় মিসাইল ও ড্রোন হামলা হতে পারে- সে আশঙ্কায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, অপারেশনের লক্ষ্য হলো ইরানে পারমাণিবক কর্মসূচি ও ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবস্থায় আঘাত হানা। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত লক্ষ্য পূরণ না হয়, অভিযান চলতে থাকবে।

আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর উত্তর-পূর্ব দিকে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে। তবে এর ফলাফলে কি ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, রাজধানীর আশপাশে ৬-৯টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আবাসিক এলাকা পর্যন্ত হামলা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

স্থানীয় সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে যে, হামলার পর রাজধানীর ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন যে, ওয়াশিংটন এই হামলায় জড়িত ছিল না। ওয়াশিংটন বলছে যে, তাদের অগ্রাধিকার হলো মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে