সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত টানা সাইরেন বেজে ওঠে কিয়েভজুড়ে, যা এক আতঙ্কিত ও নির্ঘুম রাত উপহার দেয় শহরবাসীকে। ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, এটি একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হুমকির অ্যালার্ম ছিল।
কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিটসকো জানান, "আহতদের মধ্যে ৪০ জনের বেশিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিভিন্ন আবাসিক ভবন ও অবকাঠামোর ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও লাশ থাকতে পারে – মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে।"
সলোমিয়ানস্কি জেলার এক ভবনে, যেটি আক্রান্ত ভবনের ঠিক বিপরীতে ছিল, সেখানে ৬২ বছর বয়সী এক মার্কিন নাগরিক নিহত হন, জানান মেয়র ক্লিটসকো।
সিএনএনের পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, দগ্ধ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত বহু তলা ভবন, চারদিকে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের ভেতর আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছেন। ভবনের সামনে থাকা গাড়িগুলোকেও পুড়ে যাওয়া অবস্থায় দেখা গেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সোমবার রাতের হামলায় রাশিয়া ৪৪০টি ড্রোন এবং ৩২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে। মোট ২৭টি এলাকা হামলার শিকার হয়।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লিমানকো বলেন: "উদ্ধারকারী, পুলিশ ও চিকিৎসাকর্মীরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আহতদের সহায়তা, ধ্বংসাবশেষ সরানো এবং জীবন রক্ষার জন্য।"
এই হামলার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডার G7 সম্মেলন একদিন আগেই ত্যাগ করে ওয়াশিংটনে ফিরে যান। এর ফলে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন — এটি হতো দু’জনের তৃতীয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের আগাম প্রস্থান কিয়েভের জন্য কূটনৈতিকভাবে একটি হতাশাজনক বার্তা।
বর্তমানে হোয়াইট হাউস ইউক্রেনে সরাসরি সহায়তায় বাধা দিচ্ছে, ইউরোপীয় মিত্রদের উপর চাপ দিচ্ছে যাতে তারা আরও বেশি সমর্থন দেয় এবং শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
রুশ নিরাপত্তা পরিষদের সচিব সের্গেই শোইগু বর্তমানে উত্তর কোরিয়ায় অবস্থান করছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিশেষ মিশনের অংশ হিসেবে। সেখানে তিনি কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছে রুশ সংবাদ সংস্থা তাস।
উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়া ইতোমধ্যে রাশিয়াকে মিলিয়ন মিলিয়ন গোলাবারুদ, রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে, এবং রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে উপগ্রহ ও মহাকাশ প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, রুশ আগ্রাসনের তীব্রতা বাড়ছে, এবং পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়ায় দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেন রাজনৈতিক ও সামরিক উভয় দিক থেকেই চাপে রয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।